ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া সিনেট

বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করে রেজুলেশন পাস

বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করে রেজুলেশন পাস

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক শান্তি-স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান এবং মানবিকতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট সিনেটে রেজুলেশন পাস করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সরকারি সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের কাছে (হোটেলে) জর্জিয়ার সিনেটর শেখ রহমানের পক্ষ থেকে রেজুলেশনের অফিশিয়াল কপি হস্তান্তর করা হলে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গত দু’বছর যাবৎ জর্জিয়া স্টেট সিনেটে সিনেটর শেখ রহমানের উদ্যোগে বাংলাদেশ সম্পর্কে এই প্রস্তাব উত্থাপনের ধারাবাহিকতায় এবার এই রেজুলেশন সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।

হোয়াইট হাউজে ঈদ উৎসবের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কারণে সিনেটর শেখ রহমান রেজুলেশনের কপিটি নিজে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে হস্তান্তর করতে পারেননি। তবে সিনেটর শেখ রহমানের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারসহ মিশিগানের হ্যামট্রমিক সিটি কাউন্সিলের মেম্বার নাঈম লিয়ন চৌধুরী, আবু মূসা এবং মিথুন মাহবুব রেজুলেশনের অফিশিয়াল কপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের হাতে তুলে দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশি আমেরিকান সিনেটর শেখ রহমানের এই উদ্যোগের জন্য তাকে এবং জর্জিয়ার জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন এবং শেখ হাসিনার সরকারের মানবিকতার প্রশংসা করে এমন একটি রেজ্যুলেশন পাস করায় জর্জিয়ার সকল জনপ্রতিনিধিকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’

উল্লেখ্য, জর্জিয়া স্টেট সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত ২৯ মার্চ গৃহীত এক রেজুলেশনে বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অগ্রগতি ও মানবিকতার প্রশংসা করা হয়। স্টেট সিনেটর শেখ রহমানের (ডেমক্র্যাট) উত্থাপিত এ রেজুলেশনে বলা হয়- ‘গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অথনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধু যে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ করছে তা নয় বরং শান্তি, প্রগতি এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে।’ এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নের সফল এ অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের সক্রিয় অংশীদার। দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ সম্প্রতি ৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।’

দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নানা দিক উল্লেখ করে রেজুলেশনে বলা হয়, ‘জর্জিয়া স্টেটের ৩০ সহস্রাধিক বাংলাদেশি আমেরিকানসহ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি আমেরিকান বসবাস করছে। বিগত ৫১ বছরে বাণিজ্য, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সুশাসন ও উন্নয়নসহ আরো অনেকগুলো বৈশ্বিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে দু’দেশের সরকার পর্যায়ের সম্পর্কের বাইরেও দুদেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী ৫১ বছরে সম্পর্ক আরো গভীর ও বিস্তৃত করতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে কাজ করার নানা ক্ষেত্র উল্লেখ করে রেজুলেশনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অনেক ইস্যুতে একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে যেমন- আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, মানবাধিকার সুরক্ষাসহ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ অন্যান্য ইস্যুতে দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করছে।’

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার বিষয় উল্লেখ করে রেজুলেশনে বলা হয়; ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আমেরিকার জনগণের অকুন্ঠ সমর্থনের কথা বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির অবিস্মরণীয় ভূমিকা বাংলাদেশ সবসময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে।’

রেজুলেশনে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিভিন্ন ক্ষেত্র উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ গত ৫১ বছরে বর্ধিত হারে খাদ্য উৎপাদন, দুর্যোগ-মোকাবিলা, দারিদ্র্য-বিমোচন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী ক্ষমতায়নে অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখিয়েছে।’

বাংলাদেশের মানবিকতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রেজুলেশনে বলা হয়, ‘দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতার স্বাক্ষর রেখেছে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করছে এবং এ যাবৎ রোহিঙ্গাদের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের অধিক প্রদান করা হয়েছে।’ এছাড়া কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য ৬১ মিলিয়ন ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেছে জর্জিয়া স্টেট সিনেট। সূত্র : বাসস

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত