ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা

অপহরণ সিন্ডিকেট হোতা রোহিঙ্গা সালেহ গ্রেপ্তার

আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার
অপহরণ সিন্ডিকেট হোতা রোহিঙ্গা সালেহ গ্রেপ্তার

কক্সবাজারের টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে রোহিঙ্গা হাফিজুর রহমান ওরফে সালেহ ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও মাদক কারবারসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সালেহের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সন্ত্রাসী দলে সদস্য সংখ্যা ১৫। সালেহের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলটি টেকনাফের শালবাগান পাহাড়, জুম্মা পাড়া ও নেচারি পার্ক এলাকা, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া পাহাড়, বড় ডেইল পাহাড়, কচ্ছপিয়া পাহাড়, জাহাজপুরা পাহাড়, হলবনিয়া পাহাড়, শিলখালী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। অটোরিকশার চালক এবং সিএনজিচালক হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন কৌশলে কক্সবাজারের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শ্যামলাপুর, জাদিমোড়া ও টেকনাফ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের টার্গেট করে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতি করে আসছিল তারা।

এই সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে সালেহ উদ্দিন ও তার অন্যতম সহযোগী সোহেল ডাকাতসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

গতকাল কক্সবাজারস্থ র‌্যাব ১৫-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাহাড়ে গোলাগুলির পর ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে ১টি বিদেশী পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি, দেশীয় তৈরি ৩টি একনলা বড় বন্দুক, ২টি একনলা মাঝারি বন্দুক, ৬টি একনলা ছোট বন্দুক, ১৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৪ রাউন্ড খালি কার্তুজ, ২টি ছুরি ও ৬টি দেশীয় তৈরি দা। গ্রেপ্তাররা হলো বাহিনীপ্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন ডাকাত, তার সহযোগী নুরুল আলম নুরু, আক্তার কামাল সোহেল, নুরুল আলম লাল, হারুনুর রশিদ এবং রিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি। এরা সবাই বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গা। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সালেহের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলটি অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্য মতে, গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া এলাকার ১০ জন কৃষক, ২ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শরনার্থী রেজুয়ানা, ২৬ মার্চ ন্যাচারাল পার্কের দর্শনার্থী হ্নীলার দদমিয়ার বাসিন্দা কবির আহাম্মদের ছেলে রিদুয়ান সবুজ ও একই এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আবুল কালামের ছেলে নুরুল মোস্তফা, ১৫ এপ্রিল ফুলের ডেইল এলাকা থেকে বাবুল মেম্বারের ছেলে ফয়সাল, ৩০ এপ্রিল রোহিঙ্গা হামিদুল্লাহ এবং ৩ মে রোহিঙ্গা আবুল কালামসহ অনেক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে তারা জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এর বাইরেও অর্ধ-শতাধিক অপহরণে এ গ্রুপ জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে।

লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ছালেহ উদ্দিন ২০১২ সালে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যায় এবং তৎকালীন সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার পর অবৈধভাবে উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করে। এ সময় সে অবৈধভাবে পার্শ¦বর্তী দেশে যাতায়াত ও অপরাধমূলক কার্যক্রম করতে থাকে। আক্তার কামাল সোহেল ছালেহ উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী। সে অপহরণের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ছালেহর নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করত। অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় ১০ এর অধিক মামলা রয়েছে। নুরুল আলম নুরুর বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্র, মাদকসহ ৬ এর অধিক মামলা রয়েছে। নুরুল আলম লালুসহ অন্যাদের বিরুদ্ধে ও একাধিক মামলা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।

টেকনাফ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান সালে উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণসহ ৬টির বেশি মামলা রয়েছে। র‌্যাব মামলা দায়ের করে থানায় সোপর্দ করার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত