ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবৈধভাবে নদীর মাটি কাটায় বাধা দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মতিউর রহমানের কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা সম্রাট হোসাইন তন্ময় ও তার মামাকে। ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন নির্যাতিতরা।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী শেরে বাংলা নগর থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সম্রাট হোসাইন তন্ময় জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নবাবগঞ্জের ইছামতি নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি চক্র। এ ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল তিনি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ দেয়ার পর ইউএনও কার্যালয় থেকে তাকে ও তার মামাকে ফোনে ইউএনও অফিসে যেতে বলা হয়। গত ১৮ এপ্রিল তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীদের নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে গেলে এলাকাবাসীকে বাইরে বের করে দরজা বন্ধ করে কার্যালয়ের ভেতরে তন্ময় ও তার মামাকে নির্যাতন করা হয়।
সম্রাট হোসাইন তন্ময় অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও তার দুই কানে চড়-থাপ্পর মারেন এবং আমাকে নিচে ফেলে বুকের উপর পৈশাচিকভাবে লাথি মারেন। তারপরেও তার অমানবিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, ইউএনও আমার বুকের ডান পাশে দুইটা কামর দেন, যা ভাষা প্রকাশ করার মতো নয়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিসের আনসার দিয়ে আমাকে এবং আমার মামাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে উপজেলা অফিস থেকে থানা পর্যন্ত ঘোরানো হয়। পুনরায় উপজেলা অফিসে নিয়ে এসে নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে তন্ময়ের বড় মামা আওয়ামী লীগ নেতা মো. রোকন মোল্লা ইউএনও অফিসে এলে তাকে ফ্লোরে বসিয়ে রেখে হুমকি দিয়ে গালাগাল করা হয়। পরে জোড়পূর্বক জবানবন্দি ও মুচলেকায় স্বাক্ষর নিয়ে কৈলাইল ইউনিয়ন চেয়্যারম্যান বশির আহমেদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ফেরার পথে ড্রেজার মালিক আব্দুর রাজ্জাক হিরু তার সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বর্তমানে তারা সপরিবারে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিসকে একটা টর্চার সেলে রূপান্তর করেছেন। লিখিত বক্তব্যে সম্রাট হোসাইন তন্ময় আরো বলেন, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ড্রেজার মালিক হিরুর পালিত সন্ত্রাসী খুদু মিয়া ও আ. রাজ্জাকের নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করানো হয়। অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। তন্ময় বলেন- আমি এলাকার জনস্বার্থে ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে ইউএনওর নিকট আবেদন করেছিলাম। আশা করেছিলাম আমার গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার বিঘা ফসলি জমি উক্ত সন্ত্রাসীদের থেকে রক্ষা পাবে এবং বন্ধ হবে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন। ইউএনওর এহেন কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে তিনি ভূমিদস্যু দুখু মিয়া ও তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক হিরুর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।