ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাতুড়িপেটা ও সুঁই ফোটানোর অভিযোগ

দুই বন্ধু হত্যা করে বন্ধু ইকরামকে

দুই বন্ধু হত্যা করে বন্ধু ইকরামকে

হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও সুঁই দিয়ে খুঁচিয়ে অপর বন্ধু ইকরামকে হত্যা করে মরদেহ গুম করতে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। শান্তর সঙ্গে অর্থের লেনদেন ও সিদ্দিকের মায়ের কাছে ইকরামের বেপরোয়া চলাফেরার অভিযোগ করা নিয়ে চলা দ্বন্দ্বে খুন হন ইকরাম। হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে শান্ত ও সিদ্দিককে গ্রেপ্তার করলে তাদের থেকে এ তথ্য জানতে পারে পুলিশ।

হত্যার কারণ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি ইফতেখারুল ইসলাম জানান, রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্র ছিলেন ইকরাম হোসেন। নিজের কাছে থাকা দুই লাখ টাকা বন্ধু শান্তকে দিয়ে সেখান থেকে প্রতিমাসে লভ্যাংশ নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে আসছিলেন তিনি। কিছুদিন এভাবে চলার পর সুদ হয় ভেবে বন্ধু শান্তর কাছে দুই লাখ টাকা ফেরত চান ইকরাম। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন শান্ত। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয় দুজনের। অপরদিকে অন্য কারণে ইকরামের ওপর ক্ষিপ্ত আরেক বন্ধু সিদ্দিক। শান্ত ও সিদ্দিক দুজনে ইকরামকে হত্যা করতে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী খিলক্ষেতের ডুমনী এলাকায় নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও সুঁই দিয়ে খুঁচিয়ে ইকরামকে হত্যা করেন তারা। এরপর মরদেহ গুম করতে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইকরাম পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর খিলক্ষেতের ডুমনী এলাকায় থাকতেন। বন্ধু শান্তকে ব্যবসার জন্য দুই লাখ টাকা দেন তিনি। সেখান থেকে প্রতি মাসে লভ্যাংশ নিতেন। কিন্তু রোজায় সেই লভ্যাংশ নিতে চাননি ইকরাম। তার মতে, সেই টাকা সুদ হয়ে যায়। তাই তিনি আর লভ্যাংশ নিতে চাননি। এ নিয়ে শান্তর সঙ্গে ইকরামের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

অন্যদিকে আরেক বন্ধু সিদ্দিকের বেপরোয়া জীবনযাপন নিয়ে তার মায়ের কাছে অভিযোগ করেন ইকরাম। এতে সেও ইকরামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এরপর দুই বন্ধু মিলে ইকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে খিলক্ষেতের ডুমনী এলাকায় নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও সুঁই দিয়ে খুঁচিয়ে ইকরামকে হত্যা করে তারা। এরপর গুম করতে মরদেহ কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

উত্তরা বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি ইফতেখারুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূলত দুজন জড়িত। শান্ত ও সিদ্দিক। শান্তর সঙ্গে টাকাণ্ডপয়সা লেনদেন নিয়ে সমস্যা আর সিদ্দিকের বেপরোয়া জীবনযাপন নিয়ে তার মায়ের কাছে ইকরাম অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত ছিল সিদ্দিক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শান্ত ও সিদ্দিক বন্ধু ইকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে ঘটনার রাতে তারা তাকে খিলক্ষেতের ডুমনী এলাকায় কাউন্সিলরের গলিতে ডেকে নেয়। স্বীকারোক্তির বরাতে জানা যায়- হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে ফোন করে ইকরামকে ডুমনী এলাকার কাউন্সিলরের গলির পাশে থাকা একটি বালুচরে ডেকে নেয় শান্ত ও সিদ্দিক। সেখানে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে দুজন মিলে ইকরামকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। পরে খাতা সেলাইয়ের সুঁই দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।

পুলিশ বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ইকরামকে ডেকে নেয়া হলে তিনি সরল বিশ্বাসে যান। হত্যাকারীরা একই এলাকায় থাকেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, মূলত ইকরাম নিখোঁজের পর থেকে দুই বন্ধুর কথোপকথনে বিষয়টি সন্দেহ তৈরি করে। এরপর তাদের ডেকে নেয়া হয়। একপর্যায়ে তারা স্বীকার করেছেন হত্যাকাণ্ডে মূল ভূমিকা পালন করেন সিদ্দিক। আর তাকে হত্যায় সহায়তা করেন শান্ত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত