কালপুরুষ ও কালবেলাসহ একাধিক কালজয়ী উপন্যাসের লেখক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। লেখনীর মাধ্যমে দুই বাংলার পাঠকের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক গড়ার এই কারিগর গতকাল সোমবার মারা গেছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার জানায়, কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। গতকাল বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। গত প্রায় একযুগ ধরে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) ভুগছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত এই কথাসাহিত্যিক। হাসপাতাল সূত্র বলছে, গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার জয়ী এই সাহিত্যিককে। এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। হাসপাতালে নেয়ার পর ‘ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা’ও (সিøপ অ্যাপমিয়া) বাড়তে থাকে তার। ১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম সমরেশ মজুমদারের। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লেখার গতি আর গল্প বলার ভঙ্গির কারণে দশকের পর দশক ধরে দুই বাংলার পাঠককে বিমুগ্ধ করে রেখেছেন সমরেশ মজুমদার। এই সাহিত্যিকের প্রথম উপন্যাস দৌড় প্রকাশিত হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৭৬ সালে। এরপর একে একে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ’র মতো উপন্যাস বাঙালি পাঠককে উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে সমরেশের সেরা সৃষ্টি হিসেবে মনে করা হয় ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ ট্রিলজি। এই ট্রিলজি তাকে বাংলা সাহিত্যের জগতে বিশেষ খ্যাতি এনে দিয়েছে। সমরেশের লেখনীর গণ্ডি শুধু গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে আটকে থাকেনি। ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দা কাহিনি, কিশোর উপন্যাস রচনায় সমরেশ ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তার ঝুলিতে রয়েছে অনেক পুরস্কারও। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইওয়াইএমএস পুরস্কার জয় পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের পাঠকদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। কলকাতা ও বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখকদের একজন হিসেবে পাঠক মন জয় করা সমরেশ শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন ২০১৯ সালে।