ট্রিপল নাইনে কল করে উদ্ধার
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামের চন্দনাইশে শিশু রুনা হত্যা মামলার সাক্ষীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ চৌধুরী রোকন ওই সাক্ষীকে অপহরণ করে নিজ বাড়িতে আটকে রাখেন বলে অভিযোগ করেন সাক্ষী গোলাম আজাদ (৫৫)। পরে পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। ৭ মে রাত ৯টার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজা এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।
ভুক্তভোগী গোলাম আজাদ বলেন, গত রোববার রাত ৯টার দিকে আমি গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে নিজ বাড়িতে আসার পথে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) টোল প্লাজা সংলগ্ন রাস্তার উপরে আমিন আহমেদ রোকনের নেতৃত্বে কিছু লোক আমাকে মারধর করার পর ধরে নিয়ে যায়। এ সময় আমার গাড়ির ড্রাইভারকেও মারধর করা হয়। তারা আমাকে মারধরের পর অপহরণ করে আমিন আহমদ রোকনের বাড়িতে নিয়ে রাখে। সেখানে নিয়ে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। এই আমিন আহমদ রোকনকে আমি ১০ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলাম, সেটা আজও ফেরত দেয়নি। এছাড়া শিশু রুনাকে পাশবিক নির্যাতনের পর পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি আমিন আহমেদ রোকন। আর আমি ওই মামলার সাক্ষী।
গোলাম আজাদ আরো জানান, তারপর আমার স্বজনরা ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করতে আসে। পুলিশ আসার কিছু সময় আগে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ৯৯৯-এ কল পেয়ে আমরা গোলাম আজাদকে উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করি। রাতেই তার খোঁজ পাওয়া যায়। তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে একটি অভিযোগ পেয়েছি।
এদিকে ২০১৪ সালে শিশু রুনাকে পাশবিক নির্যাতনের পর পুড়িয়ে হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছে ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনগুলো। ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমিন আহমেদ রোকনের নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোডের টিএম টাওয়ারের ৪র্থ তলার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত রুনা (১৪)।
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৩নং আইস ফ্যাক্টরির টিএম টাওয়ারের ৪র্থ তলায় আমিন আহমেদ রোকনের গৃহকর্তা রোকন বিভিন্ন সময়ে রুনাকে পাশবিক নির্যাতন চালাত। রুনার মা ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর মেয়েকে রোকনের বাসায় দেখতে গেলে মেয়ে রুনা তার সঙ্গে রোকনের অন্যায় আচরণের কথা জানায়। এ সময় আসামি রোকন ক্ষিপ্ত হয়ে রুনাকে লাথি মারে। মায়ের সামনে মেয়েকে নির্যাতনের পর রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে রুনার শরীরের অধিকাংশই পুড়ে যায়। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সে মারা যায়। রুনার মা রোকেয়া বেগম সদরঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৬(১১)২০১৪।
মামলার একমাত্র আসামি চন্দনাইশের আবদুল জব্বারের ছেলে আমিন উদ্দিন আহমেদ রোকন। বর্তমানে সে চন্দনাইশের জোয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, একটি হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না এনে বাদীকে গুম করে মিথ্যা বাদী দিয়ে মামলা তুলে নেয়া হয়। একটি অসহায় শিশুর হত্যাকাণ্ড এভাবে ধামাচাপা দিলে ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো পরিকল্পিত হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা যায় না। এমনকি এই মামলায় ঘটনার কোনো সাক্ষীকে আদালতে আনা হয়নি।