প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে মোচা

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আর সেখান থেকে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’য় রূপ নিতে পারে। আজ বৃস্পতিবার মধ্যরাতে নিম্নচাপটি দক্ষিণ-পূর্ব এবং তৎসংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগরে অত্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। সেখানে সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি গতকাল বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বার্তায় জানায়, বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এটি প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে। আর গভীর নিম্নচাপকেন্দ্রের কাছের সাগর উত্তাল অবস্থায় আছে। এ পরিস্থিতির কারণে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।

সংস্থাটি জানায়, এটি আরো ঘনীভূত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সতর্ক সংকেত দেখিয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, আগামী শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রোববার ভোরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ আঘাত হানতে পারে। আর এটি হতে পারে ‘সুপার সাইক্লোন’।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নিয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস), ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বলছে যে, একটি ঘূর্ণিঝড় আসছে। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রোববার ভোরের মধ্যে এটি আঘাত হানতে পারে টেকনাফ এবং মিয়ানমারের উপকূলে। এটি হতে পারে সুপার সাইক্লোন। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ১৮০ থেকে ২২০ কিলোমিটার হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের বিষয়ে এনামুর রহমান বলেন, আমরা কক্সবাজার জেলার ৫৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। মাঠ প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪ টন ড্রাই কেকসহ শুকনা খাবার, ২০ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চালও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, গভীর নিম্নচাপটি এখন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে আছে। এখন এর গতিপথ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমমুখী। আজকে পর্যন্ত এটি এভাবেই চলবে। এরপর যখন সাগরের কেন্দ্রে চলে আসবে তখন আশঙ্কা করছি, এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ আমাদের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের মাঝামাঝি দিয়ে অতিক্রমের আশঙ্কা আছে ১৪ মে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়।

বাতাসের গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৭ হলে তাকে বলা হয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর বাতাস যদি ১১৭ থেকে ২২০ কিলোমিটার বেগে বয়, তবে তা হয় অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়। আর ২২০ কিলোমিটারের উপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়াসহ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা, খাবার স্যালাইনসহ জরুরি প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং সাপে কামড় দেয়া রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যান্টিভেনম মজুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা জানানো হয়েছে।