নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের হাতে জোড়া খুন মামলার মূল পরিকল্পনাকারী মো. ফয়সালকে আটক করেছে র্যাব। হালিশহর এলাকার একটি বাসায় ছদ্মবেশে অবস্থানকালে গতকাল ভোর ৪টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। ফয়সাল নোয়াখালীর কবিরহাট এলাকার মো. নূর নবীর ছেলে।
এ ব্যাপারে গতকাল চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বিস্তারিত অবহিত করেন। তিনি বলেন, গত ৮ মে সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র্র করে পাহাড়তলীতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এতে যারা অংশ নিয়েছিল তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। পাহাড়তলীর কথিত বড় ভাই ইলিয়াছ মিঠুর অনুসারী এসব কিশোর ও তরুণরা চলাফেরা করত বন্ধুর মতো। ইলিয়াছকে সবাই বড় ভাই বলে সম্বোধন করতো। সিরাজুল ইসলাম শিহাব ও বন্ধু রবিউলের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও মারামারির ঘটনা মীমাংসা করার কথা বলে দুই পক্ষকে ডেকে নিয়ে রাত ৮টায় বৈঠকে বসে ইলিয়াছ। ওই বৈঠকে ইলিয়াছের সামনেই বেধড়ক পিটুনি ও ছুরিকাঘাত করে মাসুম ও সজীব নামের দুই যুবককে খুন করে ফয়সাল ও রবিউল বাহিনী।
হত্যাকাণ্ডের আগের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, গেল ৮ মে সন্ধ্যা ৭টায় সাগরিকা জহুর আহমদ স্টেডিয়াম এলাকায় নিহত মাসুমের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম শিহাব তার বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে যায়। ওই সময় শিহাবকে উদ্দেশ্য করে ফয়সাল ও রবিউল বলে- ওই মেয়ের সঙ্গে তোকে মানায়নি এবং মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। ওইসময় ফয়সাল ও রবিউলরা আঘাত পেয়ে বিষয়টি ইলিয়াছ মিঠুকে জানায়। রাত ৮টার দিকে সিরাজুল ইসলাম শিহাবকে ফোন করে ইলিয়াস বলে বিষয়টি মীমংসা করতে তার অফিসের আসতে হবে।
কথামতো শিহাবের সাথে বন্ধু মাসুম, সজীব, ফাহিম, রোকন, রজিন, তুহীন, মেহেদী হাসান, ইউসুফ ও প্রন্তসহ ইলিয়াসের অফিসে যায়। সেখানে আগে থেকেই ইলিয়াসের নির্দেশে ও ফয়সালের পূর্বপরিকল্পনায় রবিউলসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন কিশোর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে মাসুম ও সজীবকে ছুরিকাঘাত করে ফয়সাল, রনি, বাবু ও আকাশ। আহত মাসুম ও সজীবের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ইলিয়াস, ফয়সাল এবং রবিউলসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন মাসুম ও সজীবকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত সজীবের বড় ভাই বাদী হয়ে গত ৯ মে পাহাড়তলী থানায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরই মধ্যে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ইলিয়াস, রবিউলসহ আটজন গ্রেপ্তার হয়। অন্য আসামিরা পলাতক।