নৌরুটে বন্ধ যান চলাচল
সেন্টমার্টিন ছাড়ছেন অনেক বাসিন্দা
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও ততসংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে- আগামীকাল নাগাদ কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এ সময় টেকনাফ উপকূল ও প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বাতিল করা হয়েছে কর্মকর্তাদের ছুটিও। জরুরি প্রয়োজনে ০১৮৭২৬১৫১৩২ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র। এরই মধ্যে উপজেলাগুলোয় নগদ ১১ লাখ টাকা, ৪৫ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার ১৫২ কার্টুন বিস্কুট, ২ হাজার ১০৪ কার্টুন ড্রাই কেক, ৪৮ কার্টুন খাবার স্যালাই এবং ৪০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। মাছ ধরার ট্রলারগুলোও ফিরছে কূলে। পর্যটকদের সাগরে নামা থেকে বিরত থাকতে মাইকিং করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। আর নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেন্টমার্টিন ছাড়ছেন দ্বীপের অনেক বাসিন্দা। গতকাল বিকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের যান চলাচল।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, সেন্টমার্টিন থেকে নামমাত্র স্বল্পসংখ্যক লোক টেকনাফে এসেছেন। বর্তমানে ৭ হাজার লোক সেন্টমার্টিনে অবস্থান করছেন। তাদের জন্য ৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মানুষের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সিপিপির সদস্যরা কাজ করছে। জরুরি প্রয়োজন মেঠাতে পাঠানো হয়েছে শুকনো খাবার।
তিনি বলেন, সাগরের পানি বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের যানচলাচল বন্ধ রাখ হয়েছে বলে বোট মালিক সমিতির নেতারা আমাকে জানিয়েছেন। তবে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব না থাকায় অনেক ট্রলার এখনো কূলে ফিরেনি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা এলেও দ্বীপে এখনো বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়নি। এরপরও প্রশাসনের নির্দেশনায় আমরা প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। দুর্যোগ শুরু হলে যানমাল রক্ষায় কারা কোথায় অবস্থান করব, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে উঁচু ভবনগুলো। দুর্যোগকালীন শুকনো খাবার, পানিসহ জরুরি পণ্য মজুত করা হচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজারে অবস্থান করা পর্যটক পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় সমুদ্র উপভোগ করছে। তবে, সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহিত করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার ট্যুারিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেরিন আলম বলেন, এ সময়টাতে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের চেয়ে দর্শনার্থী বেশি। বর্তমানে কক্সবাজারে সহস্রাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। ঘূর্ণিঝড়ের সময় পর্যটকরা যেন সাগরে নামতে না পারে, সেজন্য সতকর্তামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও আপৎকালীন সময় জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করতে ২০ সদস্যের একটি উদ্ধার টিমও রয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দুর্যোগ শুরু হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আনার পূর্ব প্রস্তুতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টিম, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। একই সাথে কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান হতে সবাই এগিয়ে এসে মোকাবিলা করতে হবে।