‘পাকিস্তানে সেনাশাসন আসার সম্ভাবনা নেই ’
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
যে রাজনৈতিক সংকটের ঘূর্ণাবর্তে বর্তমানে ঘুরপাক খাচ্ছে পাকিস্তান, তা থেকে দেশটিকে ‘উদ্ধার করতে’ সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা সেনাবাহিনীর নেই। সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের (ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন- আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জিও নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার জিও নিউজের সাংবাদিক শাজেব খানজাদাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই শীর্ষ মুখপাত্র বলেন, ‘আমি একদম স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জেনারেল আসিম মুনির (পাকিস্তানের সেনাপ্রধান) এবং সামরিক বাহিনীর অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রের ওপর আস্থাশীল এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করেন। সুতরাং সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এসব একেবারেই অবান্তর কথাবার্তা।’ বর্তমানে যে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে পাকিস্তান, তার সূত্রপাত ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে। ওই দিনই পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী থেকে পদচ্যুৎ হন সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান, যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সামরিক বাহিনীর আশীর্বাদ নিয়েই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ক্ষমতা হারানোর পরপরই আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ইমরান। অন্যদিকে, ইমরান খান ও তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) আন্দোলন প্রতিহত করতে ইমরান খান ও পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করতে থাকে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) শীর্ষ নেতা শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন সরকার।
গত ২ বছরে পিটিআই ও সরকারের মধ্যকার বৈরিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্তমানে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রায় অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। এই অবস্থাকে আরো ঘনীভূত করে তুলেছে পাকিস্তানে চলমান তীব্র অর্থনৈতিক সংকট।
এদিকে গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়া পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেন এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সেনা সদরদপ্তরসহ বিভিন্ন সেনাদপ্তর ও সেনানিবাসে হামলা চালান। পরিস্থিতি এমন গুরুতর জায়গায় পৌঁছায় যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত বুধবার রাজধানী ইসলামাবাদসহ দেশজুড়ে সেনা নামাতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সরকার।
এদিকে সেনা নামার পর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে সেনাবাহিনীর উচ্চ ও মধ্যম পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মকর্তা চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পিটিআইয়ে যোগ দিচ্ছেন। শুক্রবার সাক্ষাৎকারে এই গুঞ্জনও উড়িয়ে দিয়েছেন মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে জিওটিভিকে পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, অভ্যন্তরীণ দুষ্কৃতিকারী ও বাইরের শত্রুদের হাজারো অপচেষ্টা সত্ত্বেও চিফ অব আর্মি স্টাফ আসিম মুনিরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সব কর্মকর্তা ও সেনাসদস্য ঐক্যবদ্ধ আছে।’ ‘শত্রুরা সবসময়ই সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যদের মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত পদত্যাগ করেননি, শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজও করেননি।