সুসংবাদ প্রতিদিন
জয়পুরহাটে কচুর লতিতে কৃষকের ভাগ্যবদল
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে লতিরাজ কচু উপজেলার কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। স্বাদে, পুষ্টিতে এবং উৎপাদনে সেরা হওয়ায় খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এটি এখন স্থান পেয়েছে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে। অন্য ফসলের তুলনায় কম শ্রম ও খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কচুর লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ প্রায় ২০টি দেশে এ লতি রপ্তানি হচ্ছে। জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুই মৌসুমে লতিরাজ কচু চাষ হয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এবং এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত। চারা বা কাণ্ড রোপণের মাধ্যমে চাষ করা যায়। কাণ্ড রোপণের এক মাস পর এবং চারা রোপণের আড়াই থেকে তিন মাস পর লতিরাজ কচু উৎপাদন শুরু হয়। কচু চাষের এক-দুই মাস পর থেকে লতি বিক্রি হয় প্রায় সাত-আট মাস। লতির পাশাপাশি কাণ্ডও উৎপাদন হয়। প্রতি বিঘা জমিতে হাল চাষ, শ্রম, সেচ, গোবর, ডিএপি, পটাশ, জিপসাম, ইউরিয়া বাবদ ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৩-৪ হাজার কেজি কচুর লতি পেয়ে থাকেন কৃষক। সরেজমিন জানা যায়, শিমুলতলী, দরগাপাড়া, আয়মারসুলপুর, বালিঘাটা, কড়িয়া, বেলপুকুর, বাগজানা, ধরঞ্জি, স্লুইসগেটসহ উপজেলার বিভিন্ন ডোবা ও নিচু জমিতে লতিরাজ কচু চাষ হচ্ছে। কৃষকরা আগাছা পরিষ্কার করা ও সার দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২৫ বছর আগে উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে লতিরাজ কচু চাষ শুরু হয়। অল্প সময়ে এতে প্রথম উৎপাদন ও লাভ হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কৃষকদের মাঝে। তবে এখনো লতির বাজারের জন্য স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। জমিতেই কথা হয় কৃষক লুতফর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, উপজেলার এ বাজার থেকে কচুর লতি মধ্যপ্রাচ্যে, কুয়েত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত কাজে ৩ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। এতে এলাকার অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষক দোলন কুমার বলেন, আমি গত বছর ৩ বিঘা জমিতে লতি চাষ করেছিলাম। এবছর ৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কচুর লতির প্রচুর চাহিদা থাকায় জমি থেকে তুলে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে নেওয়ামাত্রই তা বিক্রি হয়ে যায়। এক বিঘা কচু চাষে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। লতি ও কচু বিক্রি করে প্রতি বিঘা জমিতে ন্যূনতম ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ হয়। উপজেলার দরগাপাড়া গ্রামের লতি চাষি নূরুল আমিন বলেন, আমাদের এলাকার অনেকেই এই লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ৬ মাস পুরো মৌসুম হলেও সারাবছর এর ফলন পাওয়া যায়। গত বছর ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। এ বছর ৩ বিঘা জমিতে লাগিয়েছি। গত মাস থেকে ফলনও ভালো পাচ্ছি। ঢাকা থেকে আসা আবু জাফর ও চট্টগ্রাম থেকে আসা সিরাজ বলেন, বটতলীর এই লতির বাজার থেকে সিজন টাইমে প্রতিদিন ৬০-৮০ টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। বর্তমান কৃষকদের কাছ থেকে প্রকারভেদে প্রতি কেজি লতি ৫০-৬০ টাকা দরে কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোছা. রাহেলা পারভিন বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা থেকে ৮০ হাজার টন লতি উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। লতির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।