ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাপা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে সিইসি

নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন

নির্বাচনকালীন সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন

এখন সবার দৃষ্টি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিকে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা রয়েছে। আশা করছি, আগামীতেও থাকবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কঠিন হবে। গতকাল নির্বাচন ভবনে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বৈঠকের পর এ কথা বলেন সিইসি। জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ বৈঠকে অংশ নেয়। এ সময় সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

বিরোধীদলের পক্ষ থেকে পাঁচ সিটি নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে ব্যাপক, পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। সেই সঙ্গে বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের বিষয়ে জাপা প্রার্থীর দাবি তুলে ধরা হয়। ব্যাপক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় না করে ভালো নির্বাচন করার লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দৃশ্যমানভাবে ভালো নির্বাচন করতে না পারলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’ সেক্ষেত্রে সবার সহযোগিতান চান তিনি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, সভাটা অনেকটা সৌজন্যমূলক এবং নির্বাচনবিষয়ক। নির্বাচনটা যতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, ততই অধিকতর অবাধ ও নিরপেক্ষক হবে। নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর মাধ্যমেই নির্বাচনে এক ধরনের ভারসাম্য গড়ে ওঠে। এটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি যে, সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে, তবে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে এককভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন। আমরাও স্বীকার করেছি এবং আমরাও জোর দিয়ে বলেছি যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সরকার বিদ্যমান থাকবে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অবশ্যই প্রয়োজন হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী দল, সরকারের যে প্রশাসন, পুলিশসহ সবার সহযোগিতার কথা জানান তিনি।

সিইসি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারের তরফ থেকে আজ অবধি কোনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ পাইনি। এখন সবার দৃষ্টি জাতীয় নির্বাচনের দিকে। প্রশাসনের যে সহায়তা এখনো পর্যন্ত যা পেয়েছি, ওনারা যদি একটা নিউট্রাল অবস্থানে থাকেন, তাহলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন ভালোভাবে করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে কী হবে আমরা তো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। সরকারের ওপর আমাদের তরফ থেকে চাপটা থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন প্রভাবিত হলে, সোশ্যাল মিডিয়া নয়, (মূল ধারার) গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের কাছে তথ্য এলে নেগেটিভ কোনো বিষয় যদি আমরা দেখি যে ঐকমত্য হয়েছে, তাহলে কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

সিলেট সিটিসহ অনেক এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, অসংখ্য আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। সবকিছু আমলে নেয়ার মতো হবে না। কারণ হচ্ছে, লোম বাছতে গিয়ে যদি কম্বল উজাড় করে ফেলি, সেটা খুব বাস্তব হবে না। আমি বলেছি, দিন শেষে মানুষ যেটা জানতে চায়, নির্বাচনটা কেমন হলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি জানান, এ নির্বাচনে কে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, ক’টি আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে, কেউ আজও প্রশ্ন তোলেন না। তখনো করেননি। নির্বাচনের দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পোলিং প্রসেস, ভোটিং প্রসেসটা ভালো করতে হবে, দৃশ্যমান হতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনটা ভালো হয়েছে কি না তা দৃশ্যমান করতে হবে। দৃশ্যমান না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এটা আমরা দৃশ্যমান করতে চাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, সরকারের সদিচ্ছা থাকবে এবং জাপা মহাসচিবকে বলেছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাদের করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। ভালোভাবে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন, তাহলে নির্বাচনের শুদ্ধতা বিঘিœত হতে পারে।

বৈঠক শেষে জাপা মহাসচিব মুজবুল হক চুন্নু বলেন, পাঁচ সিটির ভোটে জাপা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। সেগুলো সুরাহা করার জন্য আসছি। গাইবান্ধার ভোট নিয়ে কিছু কথা ছিল। গত ইউপি নির্বাচন নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা। সেই সময় যারা নির্বাচন কমিশনে ছিলেন, তারা তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। গাইবান্ধায় অনিয়মের কারণে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। চুন্নু বলেন, কমিশনকে আজকে আমরা বলেছি যে, শাস্তিমূলক বিষয়গুলো যদি দৃশ্যমান না হয়, জনগণ যদি জানতে না পারে, তাহলে তো আস্থা আসবে না। তিনি জানান, বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তার বাজে ব্যবহার এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়টিও তুলেছেন তারা। সিইসি বলেছেন, তদন্ত করে দেখবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ভালো নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি মূলত ইসির দায়িত্ব, রাজনৈতিক দলেরও আছে। প্রার্থীদেরও আছে, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদেরও আছে। কাজেই সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের মনের মধ্যে একটা শঙ্কা যে, নির্বাচনটা ফ্রি ও ফেয়ার হয় কি না।

রাতারাতি ইসিও কিছু করতে পারবে না উল্লেখ করেন চুন্নু বলেন, তবে সদিচ্ছা ও সাহস যদি থাকে, সেই সাহস দেয়ার জন্যই আমরা আসছি। ইসির প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আছে বলেই তো আসছি তাদের সহযোগিতা করতে এবং সহযোগিতা নিতে।

জাপা প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, দপ্তর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত