চট্টগ্রামে বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে এখন ৮০ টাকা
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েই চলেছে। ভারত থেমে আমদানি বন্ধের পর থেকেই দাম ঊর্ধ্বমুখী। পেঁয়াজের আড়তে মজুত আছে পর্যাপ্ত। এরপরও লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি অনুমোদন (আইপি) দেয়ার কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ধরনের ঘোষণার পরদিন গেল সোমবার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি দাম কিছুটা কমে যায়। আশপাশের খুচরা বাজারেও কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার সেই চিত্র পাল্টে যায়। পেঁয়াজের দাম বেড়েইে চলেছে। পাইকারিতে কেজি প্রতি দাম পড়ছে ৭০ টাকার কাছাকাছি। আর খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের ৮০ টাকা। কাল-পরশু প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা দাম ৮০ টাকা ছাড়ানোর আশঙ্কা ক্রেতাদের।
খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ মে পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি বা আইপি পায়নি। এর জের হিসেবে দামের পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। তবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলেছেন, আমদানির অনুমতি পেলে পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগের মতো প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকায় কমে আসবে না। ওই পর্যায়ে দাম পৌঁছাতে হলে ভারত থেকেই আবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু করতে হবে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজের দামে তেমন হেরফের হবে না। তবে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে ক্রেতাদের অনেকেই মনে করেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত করেছেন। তাদের মতে, মজুতদার ব্যবসায়ীরা অতীতেও মজুত করে দাম বাড়িয়েছেন। পরে সেই মজুত পেঁয়াজ কর্ণফুলী নদীর পাড়ে পচা নষ্ট অবস্থায় ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাদের মতে, আইপি পাওয়ার পরের দিনই পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। সরবরাহ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে কমে আসবে দাম। এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ভয়ে অনেকেই গোডাউনে লুকিয়ে রেখেছেন পেঁয়াজ।
সরকারে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গেল ১৪ মে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন কয়েক দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। এরপর এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি। যার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে রয়েই গেছে। গত ১১ মে পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হবে বলে ইঙ্গিত দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এরপর থেকে শুধু আমদানি হবে এ ধরনের একটি ধারণা প্রচলিত আছে। বাস্তবে আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়নি। আমদানির পর বাজারে সরবরাহ হলেই শুধু দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
খাতুনগঞ্জের এক আড়তদার জানান, পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন (আইপি) দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরপর পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে। অনুমতি দিলে বাস্তবেই দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে সেই অনুমতি এখনো মেলেনি। গত মঙ্গলবার ও গতকাল চট্টগ্রামের পেঁয়াজের বাজার ছিল আগের মতোই ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি দর প্রতি কেজি মানভেদে ৬২ টাকা থেকে ৭০ টাকা ছিল। খুচরা বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে দাম আরো বাড়তে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানান, পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় বড় ঘাটতি রয়েছে। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানো ছাড়া বিকল্প নেই। তবে পেঁয়াজ উৎপাদনও ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত ২ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হলে পেঁয়াজ আমদানিতে বিদেশ নির্ভরতা কমবে। এতে পেঁয়াজ নিয়ে বছরজুড়ে অস্থিরতা থাকবে না। ক্রেতারাও স্বস্তি পাবেন।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার বিসমিল্লাহ স্টোরের ইদরিস সওদাগর জানান, হঠাৎ করেই দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা করে বিক্রি করেছি। বুধবার সেই পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৮০ টাকা করে। বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছি। আমরাও চাই না ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে।
নগরীর বৃহত্তম বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসেন ক্রেতা মফিজ উদ্দিন। তিনি গতকাল বলেন, আমরা মনে করি না প্রতি ৮০ টাকা বিক্রি করার মতো পরিস্থিতি হয়েছে। আসলে ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট সব সময় সক্রিয় থাকে। মূলত তারাই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক কর্মকর্তা বলেন, বাজারে প্রশাসনের কোনো ধরনের তদারকি নেই। ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করলেও আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত মজুত আছে। আমদানি বন্ধ করার দুই সপ্তাহর মধ্যে প্রতি কেজি ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকা হওয়ার কথা নয়। মজুতদারদের কারসাজি এবং প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। পাশাপাশি আড়তগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হোক।