পারিবারিক বিরোধে ৩৫ বছর কর্মজীবন শেষে আলী আহাম্মদ (৬৩) নামের এক ব্যক্তি অবসরে আসার পর জাল সার্টিফিকেটে বাখড়াবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (বিজিডিসিএল) চাকরির গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন খোদ পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার ৪নং গালাগাঁও ইউনিয়নের মুলাবাড়ী এলাকায়। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় ঘটনাটি তদন্তের দাবি উঠেছে।
আলী আহাম্মদ মুলাবাড়ী এলাকায় মৃত আলী আকবরের ছেলে। ১৯৮০ সালে সে এইচএসসি পাসের জাল সার্টিফিকেট দিয়ে বাগড়াবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে কনস্ট্রাকশন সুপারভাইজার পদে চাকরিতে যোগদান করে ডেপুটেশনে যোগ দেন গ্যাস ট্রান্সমিসন কোম্পানি লিমিটেডে (জেটিসিএল)। এরপর টানা ৩৫ বছর চাকরি শেষে ২০১৫ সালে কোটি টাকার পেনশন নিয়ে অবসর নেন আলী আহাম্মদ। এরই মাঝে জাল সার্টিফিকেটে চাকরি করে নানা-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এমন অভিযোগ আলী আহাম্মদের সহোদর ভাই মো. সাইদুল ইসলাম, ভাতিজা এনামুল করিম রাসেলসহ পরিবারের স্বজনদের।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি পারিবারিক বিরোধে গোপন এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে আলী আহাম্মদের এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেটটি যাচাই করতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে লিখিত আবেদন করেন তার সহোদর ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩ মার্চ এই সার্টিফিকেট জাল বলে সত্যায়ন করেন সংশ্লিষ্ট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. হেলাল উদ্দিন। এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীরা।
আলী আহাম্মদের বড় ভাই মৃত এরশাদ আলীর ছেলে রাসেল অভিযোগ করেন, জাল সার্টিফিকেটে চাকরি করে আলী আহাম্মদ ঢাকার ডেমরা এলাকায় ছয় তলা বাড়ী, আদাবরে কোটি টাকার ফ্ল্যাট, ময়মনসিংহ নগরীর এসএ সরকার রোড এলাকায় ১৫ শতক জমি, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার শ্বশুড়বাড়ীতে কয়েক একর জমিসহ গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এখন তিনি ভাই-ভাতিজাদের নামে মামলা করে হয়রানি করছেন।
আহাম্মদের ছোট ভাই সাইদুল ইসলাম বলেন, সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষয়টি বোর্ডে প্রমাণ হয়েছে। এছাড়াও তার মুক্তিযোদ্ধার সনদেও রয়েছে জালিয়াতি। এভাবে সে প্রতারণা করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মস্মাৎ করেছেন। তদন্ত করলে এই জালিয়াতির প্রমাণ মিলবে বলেও দাবি তার। তবে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আলী আহাম্মদ বলেন, আমার ভাই-ভাতিজা মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানি করছে। কিন্তু আমি চাইলে তাদের অনেক কিছু করতে পারি, তবে করি না। আমার লবিং অনেক বড়, অনেক সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আমার বন্ধু।
এ সময় আলী আহাম্মদ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতার নাম উচ্চারণ করেন এবং তাদের ঘনিষ্ঠভাজন পরিচয় দিয়ে এই প্রতিবেদককে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন।
এদিকে এই ধরনের জালিয়াতির অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন ময়মনসিংহ সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, দুদকে যে কোনো অভিযোগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত করা হয়। এতে প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।