‘ফিস্টুলা’রোগ চিকিৎসা

কক্সবাজারে হচ্ছে দেশে প্রথম ১শ বেডের ইউনিক সেন্টার

থাকছে নিরাপদ মাতৃত্ব, ফিস্টুলার সার্জারি, সার্জনদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা কার্যক্রম, দেয়া হবে ফ্রি সেবা

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজারে হচ্ছে দেশের প্রথম ফিস্টুলা চিকিৎসার ইউনিক সেন্টার। বেসরকারি সংস্থা হোপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রামুর চেইন্দা এলাকায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ১০০ বেডের আধুনিক এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি ফিস্টুলার রেফারেল সেন্টার হিসেবেও কাজ করবে। একই সাথে নতুন আরো একটি ‘হোপ মেটানেটি অ্যান্ড ফিস্টুলা সেন্টার’ হিসেবে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মাসের শেষের দিকে হাসপাতালটি উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছেন হোপ ফউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কেএম জাহিদুজ্জামান।

তিনি বলেন, ফিস্টুলা রোগের সেবা দেয়ার জন্য হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। যেটির নাম হোপ মেটানেটি অ্যান্ড ফিস্টুলা সেন্টার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মে মাসের শেষের দিকে হাসপাতালটি উদ্বোধন করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে নিরাপদ মাতৃত্ব, ফিস্টুলার সার্জারি, সার্জনদের প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা কার্যক্রমও চলবে। যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তায় হোপ ফাউন্ডেশন ফিস্টুলা চিকিৎসার ইউনিক সেন্টারটি চালু হচ্ছে।

তথ্য মতে, দেশে ফিস্টুলার প্রায় ২০ হাজার রোগী রয়েছে। তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর সাথে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে আরো ১ হাজার রোগী। কিন্তু ৭০০ থেকে ৮০০ জনের বেশি রোগীকে সার্জারি করা সম্ভব হয়। যার কারণে রোগীর সংখ্যা গাণিতিক হারে বাড়ছে। তাই ফিস্টুলা রোগ কমাতে অন্তত আরো ৩ থেকে ৪ গুণ সার্জারি বাড়াতে হবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ও হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. ইফতিখার মাহমুদ।

তিনি বলেন, প্রসবের সময় জটিলতা দেখা দিলে, প্রসব বাধাগ্রস্ত হলে, প্রসবজনিত ক্ষত তৈরি হলে, সময় মতো শিশুর প্রসব না হলে, জরায়ুতে শিশু মারা গেলে, মূত্রথলি বা পায়ুপথ মারাত্মক ক্ষত তৈরি হলে বুঝতে হবে এটি ফিস্টুলা। এ রোগ হলে প্রস্রাব ও পায়খানার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। নারীর শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। ফিস্টুলা রোগীর প্রজনন ক্ষমতা চলে যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে স্বামী ত্যাগ করে, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে মিডওয়াইফারি সেবার মাধ্যমে ডেলিভারি হলে ফিস্টুলা রোধ করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, ফিস্টুলা রোগীদের সার্জারি অনেক ব্যয়বহুল এবং দক্ষ প্রশিক্ষিত সার্জন ছাড়া সার্জারি করাও ঝুঁকি। তাই অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য হোপ ফাউন্ডেশন ফ্রিতে এ সেবা নিতে পারবে। সেবা নেয়ার পরে যারা সুস্থ হচ্ছেন তাদের অনেককে হোপ ফাউন্ডেশনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেককে ফিস্টুলা অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। হোপ ফউন্ডেশনের কান্ট্রিডিরেক্টর কেএম জাহিদুজ্জামান বলেন, এ রোগে আক্রান্ত সকল রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে হোপ ফাউন্ডেশনে বছরে ১০০ রোগীর সার্জারি করা হয়। ভবিষ্যতে ৩০০ রোগীকে সেবার আওতায় আনার টার্গেট নেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো চাইলে ফিস্টুলা নিয়ে কাজ করতে পারে। একই সাথে ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার জন্য ফান্ডিং বাড়াতে সরকারি, বেসরকারি দাতা সংস্থা এবং লাভজনক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।