রাজবাড়ী জেলা সদরের দাদশী ইউনিয়নের ৫০ বছর বয়সি রকিব উদ্দিন বেগ। ৮ বছর আগে ইউটিউব দেখে দুই একর জমিতে আমের বাগান করেন। এখন তার আমবাগান থেকে বছরে ৭ লাখ টাকার আম বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে রকিব উদ্দিনের দুই একর জমিতে ৫ শতাধিক আম গাছে প্রচুর পরিমাণে আম ধরেছে। উন্নত জাতের আমবাগান করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি। রকিব উদ্দিন বেগ জেলা সদরের দাদশী ইউনিয়নের সিংঙ্গা গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল কাদের বেগের ছেলে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরে ২৫৫ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ১১০ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০ হেক্টর ও পাংশা উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন চাষিরা। যার প্রতি হেক্টর জমিতে ১১ মেট্রিকটন আমের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরেজমিন দাদশী ইউনিয়নে আম চাষি রকিব উদ্দিন বেগের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তার প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে আম্রপালি, হিম সাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, বারি ফোরসহ বিভিন্ন উন্নত সুমিষ্ট জাতের বড় বড় আম। বাগানেই আম কিনতে এসেছেন অনেক ক্রেতা। রকিব উদ্দিন বেগ বলেন, ৮ বছর আগে আমি ইউটিউবে দেখি অনেক কৃষি উদ্যোক্তা উন্নত জাতের আমের বাগান করে ভালো ফলন ও লাভবান হচ্ছেন। তারপর আমি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিজের গ্রামে দুই একর জমির উপরে ৫ শতাধিক আমের গাছ রোপণ করি। প্রতি বছরের মতো এ বছরও আল্লাহর রহমতে প্রতিটি গাছে ব্যাপক ফলন হয়েছে। আনুমানিক হিসেবে প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি আম আছে। সে হিসাবে গড়ে প্রতি গাছে ৩০ কেজি হলেও ৫ শতাধিক গাছে ১৫ হাজার কেজি বা ৩৭৫ মণ আমের ফলন পাব বলে আশা করছি। প্রতি কেজি আমের দাম যদি ৫০ টাকা কেজি ধরি তাহলে এই বাগানে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার আম বিক্রি করব ইনশাআল্লাহ। উন্নত জাতের আম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। আমার সফলতা দেখে এই গ্রামের অনেকেই আমের বাগান করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমার এই বাগানে ভালো মানের আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, মল্লিকা, ফজলি, হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ আরো অনেক উন্নত জাতের আম রয়েছে। আমি আমার এই বাগানে কোনো প্রকারের ক্ষতিকারক ওষুধ বা কীটনাষক প্রয়োগ করিনি। এজন্য সবার কাছে আমার বাগানের আমের সুনাম রয়েছে।
বাগানে আম কিনতে আসা ক্রেতা এম মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আগে বাজার থেকে আম কিনতাম। সেগুলোতে অনেক সময়ে পোকা থাকত। এখন আমাদের এখানে স্থানীয় অনেক আমের বাগান হয়েছে। বাগানে এসে সরাসরি আম ক্রয় করছি। রাজবাড়ী জেলার বাগনের আমগুলো অনেক স্বাদ। দামও মোটামুটি হাতের নাগালে। আমরা এখন ভালো মানের আম কিনতে পেরে অনেক খুশি। আমের ব্যাপারী সুমন শেখ বলেন, আমরা প্রতি বছর এখন রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন গ্রামের আমবাগান ধরে ক্রয় করি। সঠিক সময়ে আম গাছ থেকে সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের কয়েকটি জেলাতে বিক্রি করি।
সারা দেশে রাজবাড়ী জেলার আমের সুনাম দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক চাষিই আম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের দাদশী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বশির আহম্মেদ বলেন, রাজবাড়ী জেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। দাদশী ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক আমের চাষাবাদ করেছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার অন্যতম।
তিনি আম চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই আম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত আম চাষিদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি আগামীতে এই অঞ্চলে আমের চাষাবাদ আরো বাড়বে।