বদলির আদেশ আটকে রেখে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ-নেত্রকোনা সড়কে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণে ১০ পার্সেন্ট হারে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে সার্ভেয়ার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক আবুল হোসেনের ওয়ারিশানদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা চেক প্রদানে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করা হয় বলেও জানান ভুক্তভোগী।
এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট ময়মনসিংহ ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার মো. হাবিবুর রহমানের বদলির আদেশ হলেও বিগত ১০ মাসে সেই আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। গুঞ্জন উঠেছে- বদলির আদেশ ঠেকাতে মোটা অঙ্কের টাকার মিশন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করছেন এই কর্মচারী। তবে বদলির আদেশে স্বাক্ষর করা ঢাকা ভূমি সংস্কার বোর্ডের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, এখনো তিনি বদলির হয়নি, তা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওা হবে।
এরই মধ্যে ঘুষের ১০ লাখ টাকা নগদে এই সার্ভেয়ারকে দেয়া হয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি।
একই সঙ্গে ওই সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক হাসিম উদ্দিনের ওয়ারিশান স্ত্রী ও তিন মেয়েকে ক্ষতিপূরণের ৮৪ লাখ টাকার চেক প্রদানে ১০ পার্সেন্টের একটু কম হারে ঘুষ দেয়ার চুক্তি চূড়ান্ত বলেও দাবি সূত্রের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সার্ভেয়ার হাবিবুর রহমান কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত থাকাকালে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তখন ঘটনাটি দুদকে তদন্ত শুরু হলে বদলি হন নেত্রকোনায়। সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় বদলি হয় কলকান্দা উপজেলায়। এরপর উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার তদবিরে সেখান থেকে বদলির আদেশ নিয়ে যোগ দেন ময়মনসিংহ এলএ শাখায়।
তবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হলে গত বছরের ১৪ আগস্ট তার বদলির আদেশ হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে। কিন্তু এই আদেশের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যকর হয়নি সেই আদেশ।
বদলি আদেশের সত্যতা স্বীকার করে সার্ভেয়ার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সার্ভেয়ার সংকটে আমাকে অবমুক্তি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তবে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ সঠিক নয়।
এছাড়া আমার বদলি ঠেকাতেও কোনো দৌঁড়ঝাপ নেই। ময়মনসিংহ এলএ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেন, বদলির বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয় বলতে পারবেন। তবে কোনো ধরনের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ময়মনসিংহের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট এলএ শাখায় অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনার তদন্তে সত্যতা পায় জেলা প্রশাসন। এরপর ওই তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দুই সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই ঘটনায় সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর বদলি হলেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে অভিযুক্ত অপর সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন। এ নিয়েও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে।