ব্যক্তিগত কাজ না করে দেয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী উত্তম বৈরাগীকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার। এ ঘটনার পর ভয়ে দুই দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না ভুক্তভোগী ওই কর্মচারী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার (১৯ মে) রাত ৮টায় ডিউটি শেষ করে বাসার পথে রওনা হন উত্তম বৈরাগী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আসলে তাকে আটকান কর্মকর্তা সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার। এরপর উত্তম বৈরাগীকে তার একটি ব্যক্তিগত কাজ করে দেয়ার জন্য বলেন। এ সময় ওই কর্মচারী জানান, সারা দিন ডিউটি করায় তিনি ক্লান্ত। তাই বাসায় যাচ্ছেন। সে জন্য তার কাজটি করে দিতে পারবেন না। উত্তম বৈরাগীর এই কথা শুনে রেগে যান কর্মকর্তা কামাল হোসেন। তখন কামাল হোসেন বলেন, তোর এতো বড় সাহস। কর্মচারী হয়ে কর্মকর্তার মুখের ওপর কথা বলিস! তোর ঘাড়ের রগ সোজা করে দিব। ১৩ তারিখের পর (১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অবসর গ্রহণের দিন) তুই কেমনে চাকরি করিস দেখে নিব।’ এরপর ওই কর্মচারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন কামাল।
এরপর ওই কর্মচারী মানসিকভাবে কষ্ট পেয়ে কারোর নাম উল্লেখ না করেই এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেন, ‘কিছু কিছু ডেপুটি রেজিস্ট্রার কর্মচারীদেরকে মানুষ মনে করে না। তারা নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারেন। এসব ডেপুটি রেজিস্ট্রারদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম হয়। কিন্তু সব ডেপুটি রেজিস্ট্রার সমান হয় না। কিছু মাটির মানুষও আছে। আসলে আমরা ছোট চাকরি করি, তাই আমাদের হাত-পা বাঁধা থাকে কাউকে কিছু বলতে পারি না। কেউ আমার কথা কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি খুব দুঃখিত।’
ফেইসবুকে এই পোস্ট দেওয়াই কাল হয়ে দাঁড়ায় ভুক্তভোগী উত্তম বৈরাগীর জন্য। পরদিন অভিযুক্ত কামাল হোসেন সরকার, কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের (কাজী মনির), হিমাদ্রী শেখর মন্ডল, পুলক ঘোরামীসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে ভুক্তভোগী উত্তম বৈরাগীকে ডেকে নিয়ে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় উত্তম বৈরাগীকে দিয়েই স্যরি বলান তারা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী উত্তম বৈরাগী বলেন, আমাকে তিনি তার একটি ব্যক্তিগত কাজে যেতে বলেছিলেন। আমি ক্লান্ত থাকায় যাইনি। সেজন্য আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। কষ্ট পেয়ে কারোর নাম উল্লেখ না করেই ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। এরপর আবারও আমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কিছু করে কিনা তাই আমি ভয়ে দুই দিন ক্যাম্পাসে যাইনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার বলেন, ‘কাজটির বিনিময়ে আমি তাকে টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও সে করেনি। আমি তার বস, সিনিয়র। সে এমনভাবে বলে তাই আমার একটু খারাপ লাগে। তবে তাকে চাকরিচ্যুত করার কোনো হুমকি দিইনি।’ এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।