ভালোবাসায় মোড়ানো মুগ্ধতার এক সড়ক

সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছে পর্যটক

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মোঃ হান্নান, রাঙামাটি

‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো? হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গানের কথার মতোই ভালোবাসায় মোড়ানো রাঙামাটির আসামবস্তির-কাপ্তাই সড়ক দর্শনে এসে খেই হারিয়ে ফেলেন ভ্রমণপিপাসুরা। নীলাকাশ, উঁচু নিচু সবুজ পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য্যরে মুগ্ধতা যেন কোনো চিত্রশিল্পীর নিখুঁতভাবে আঁকা ছবি। ভালোবাসায় যুক্ত করতে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য্যকে পেছনে রেখে নির্মিত ‘আই লাভ রাঙামাটি’ সিম্বল সবার মনে দাগ কেটে যায়।

এই একটি মাত্র সড়কে বদলে গেছে সবকিছু, ফুটে উঠেছে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য। ২০১৭ সালের জুনে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ক্ষত কাটিয়ে আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক এখন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অন্যতম স্পটে পরিণত হয়েছে। উন্নতির পথে হাঁটছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, যাতায়াত ব্যবস্থা, প্রান্তিক মানুষের জীবনমান। সড়কের একপাশে উঁচু সবুজ পাহাড়, অপর পাশ ঘেঁষে পাহাড়ের ঢালু বেয়ে নেমে গেছে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সড়কের সৌন্দর্য্য দেখতে ভিড় করছে অগণিত পর্যটক। স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি কিংবা ভিডিওতে নিজেদের বন্দি করে রাখতে ব্যস্ত সবাই।

এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত সড়কটি রাঙামাটি শহরের সাথে আসামবস্তি হয়ে কাপ্তাই উপজেলাকে যুক্ত করেছে। ২০২১ সালের শুরুতে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির সম্প্রসারণ ও তিনটি সেতু মেরামতের কাজ শুরু হয়। সড়কটি নির্মাণকারী সংস্থা স্থানীয় সড়ক প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করছে। আগামী মাসে এর সম্প্রাসরণ নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ এলজিইডি কর্তৃপক্ষের।

পাহাড়ের বুক বেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই সড়ক মগবান, বরাদমসহ সংযোগ এলাকার সার্বিক অবস্থাকে পাল্টে দেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে। সড়ক হওয়ায় দীর্ঘ ৫২ বছর পর বিদ্যুৎ এসেছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা এলাকা হওয়ায় বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। যার মধ্যে বার্গি লেইক, রাইন্যাটুগন, বেরাইন্নে, বরগাঙ অন্যতম। এছাড়াও কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষা ও আত্মসামাজিক অবস্থাতে গতি ফিরেছে। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৌদ্ধদের ধর্মীয় গুরু মহাসাধক সাদনানন্দ মহাস্থবির ভনভান্তের জন্মস্থান এই সড়কটির গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়েছে। এছাড়া আগে কাপ্তাই উপজেলাতে মূল সড়ক দিয়ে যেতে যেখানে দেড় ঘন্টা সময় লাগত সেখানে এই সড়ক দিয়ে মাত্র ৪০ মিনিটে যাওয়া যায়। দূরত্ব কমেছে ২০ কিলোমিটারের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সড়ক হওয়ার পর যে গতিতে এই এলাকার পরিবর্তনগুলো হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য। ১০-১৫ বছর আগেও এখানকার যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। অনেকে আবার দুর্গম পাহাড়ি পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করত। এখন এগুলো কিছুই বোঝার উপায় নেই। এই উন্নয়ন এলাকাবাসীর জন্য কতখানি ইতিবাচক ফল এনেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকাটি রাঙামাটি শহরের খুব নিকটবর্তী হলেও যোগাযোগ খুব সহজ ছিল না। এখন সবকিছুই সহজ। কাপ্তাইয়ের সাথে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। মানুষ এখন খুব সহজে যাতায়াত করতে পারছে।

সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে আসা কয়েকজন পর্যটকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জায়গাটি এক কথায় অসাধারণ। চার পাশে প্রকৃতি যেভাবে সেজে বসে আছে, মুগ্ধ না হয়ে উপায় নাই। মন ভালো করে দেয়ার মতোই একটি স্থান। ভালোভাবে প্রচার হলে পর্যটকরা ভিড় জমাবে এই স্থানে।

এলজিইডি রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রণব রায় বলেন, ‘সড়কটি পর্যটকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে কাজে লাগিয়ে সড়কটি নতুন করে দুই লেনে সম্প্রসারণ করার কারণে পর্যটন খাতসহ সবকিছুতে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। আগামী মাসে আশা করছি সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।

এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফী বলেন, বর্তমান সরকারের স্মার্ট সিটির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের লক্ষ্যে কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, এটি রাঙামাটিতে আগত পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নেবে এবং অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।