চট্টগ্রামে আদার দাম দুই মাসে কেজিতে বেড়েছে তিনগুণ
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা দুই পর্যায়েই বেড়েছে আদার দাম। এখনই কেজিতে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ১২০ টাকার আদা এখন ২৬০ টাকা থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির ঈদের আগে আদার দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত দুই মাসের মধ্যে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা দুই পর্যায়ে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এজন্য দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে মনে করছেন অনেকেই। ক্রেতাদের বরাবরের মতো দাবি সিন্ডিকেট করেই আদার দাম বাড়ানো হয়েছে। তারা মনে করছেন, এখনই আদার দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। আর ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, আমদানি কম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। দুই কারণে বাড়ছে আদার দাম। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই আদার দাম স্বাভাবিক হবে।
গেল দুই দিন খাতুনগঞ্জের আড়ত ও বিভিন্ন বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আদার সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার সমান আদা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাই আদার দাম বেড়েইে চলেছে। তবে খাতুনগঞ্জের আড়তে দেখা যায় মজুত পর্যাপ্ত। আড়তগুলো আদায় ঠাসা। কেবল ঘাটতি রয়েছে চীনা ও দেশি আদার। চীনা আদা না মিললেও মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের আদার সরবরাহ রয়েছে। সেই সঙ্গে সীমিত পরিমাণে দেশীয় আদার সরবরাহও আছে। অর্থাৎ, আড়তে মজুত আদার একটি অংশ দেশীয়। বাকি আদাগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা। এক মাস আগে খুচরা বাজারে মিয়ানমারের আদা কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেই আদা কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। দুই মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের আদা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। ইন্দোনেশিয়ার আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮৫ টাকায়। এক মাস আগে বিক্রি হয় ১৪৫ টাকা। ভারতের কেরালার আদা ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা।
এদিকে মিয়ানমার ও ভারত থেকে আমদানি করা আদা কিনে আনাড়ি ক্রেতারা ঠকছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে। কারণ এসব আদাকে দেশি বলে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। নগরীর বৃহত্তম চকবাজার কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা ইব্রাহিম জানান, ধাপে ধাপে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ আদার দামও এখন বাড়ছে। আমার মতে এখন আগের চেয়ে তিনগুণ দাম বেড়েছে আদার দাম। নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কোনো ধরনের তৎপরতা না থাকায় দাম বেড়েইে চলেছে। এখনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হবে। অন্যথাই আদার দাম প্রতি কেজি ৫০০ টাকা ছাড়াতে পারে।
খাতুনগঞ্জের পাইকাররা জানান, কোরবানির ঈদ ঘিরে দাম বাড়ছে বিষয়টা এমন নয়। সরবরাহে ঘাটতির কারণেই বাড়ছে দাম। তার মতে, সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে কোরবানির ঈদের আগ পর্যন্ত দাম বাড়তেই থাকবে। তবে কোরবানির ঈদের পর দাম বৃদ্ধির আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, ওই সময় থেকে আদার চাহিদা কমতেই থাকবে। দাম বৃদ্ধির জন্য চীনা আদা আমদানি কমে যাওয়া অনেকাংশে দায়ী। আমদানি খরচ বৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ী চীনা আদা আমদানি করতে পারছে না। তাই চীনা আদা বাজারে নেই বললেই চলে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এখন আদার বাজার পুরোটা ইন্দোনেশিয়ান ও মিয়ানমারের আদার ওর।
আড়তদার মুহিবুল ইসলাম জানান, সরবরাহ ঘাটতি হলেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এটাতো জানা কথা। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের হিসাব করে লাভ নেই। বরং প্রকৃত সত্যটা স্বীকার করলেই হয়। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের পাইকাররাও মনে করেন চাহিদার বিপরীতে বাজারে আদার প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। এজন্য দাম বাড়ছে দ্রুত। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে চীনা আদা চাহিদার বিপরীতে সরবরাহে একটি ব্যালেন্স রক্ষা করে চলত। কিন্তু বাজারে এখন চীনা আদা নেই। দেশীয় আদার সরবরাহ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই দাম বাড়ছে আদার। আদার বাজারে আমদানি খরচ বৃদ্ধি, শতভাগ ব্যাংক অর্থায়নে মালামাল আনতে হচ্ছে। তাই অনেক ব্যবসায়ী আমদানিবিমুখ হচ্ছেন, যার কারণে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, দেশে বছরে আদার চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টনের। তবে আমদানিকারকদের মতে এই চাহিদা ৬ থেকে ১০ লাখ টনের মতো হবে। দেশে উৎপাদিত আদার চাহিদা তেমন পূরণ করতে পারে না। তাই আদার বাজার পুরোটা আমদানি নির্ভর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে আদা উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টন। যা চাহিদার বিপরীতে একেবারেই কম। তাই আমদানি করেই চাহিদা পূরণ করতে হয়।