টানা ১৫ মাস ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। অনেকে এই যুদ্ধ বন্ধের আশা করলেও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে সৃষ্ট এই সংঘাত অবসানের কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। আর এমনই এক পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক দশক ধরে চলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষস্থানীয় মিত্রদের একজন। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। রাশিয়ার বার্তাসংস্থা আরআইএর বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ কয়েক দশক ধরে চলতে পারে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনের পর দীর্ঘসময় রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান। বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষস্থানীয় এই মিত্র ভিয়েতনাম সফরের সময় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সর্বশেষ ওই মন্তব্য করেন। অবশ্য রাশিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট প্রায়ই কঠোর নানা মন্তব্য করে থাকেন। এমনকি গত মাসে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষকে সংক্রমণ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন তিনি। এছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়া হারলে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এই পুতিন মিত্র। ভিয়েতনাম সফরের সময় দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘এই সংঘাত খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলবে, সম্ভবত কয়েক দশক।’ ইউক্রেন নাৎসি রাষ্ট্র বলে মস্কোর দাবির পুনরাবৃত্তি করে রাশিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যতদিন দেশটিতে এই ধরনের (সরকার) ক্ষমতায় থাকবে, সেখানে দেখা যাবে তিন বছরের যুদ্ধবিরতির পর দুই বছর ধরে সংঘাত হচ্ছে এবং এগুলোর সবকিছুরই বার বার পুনরাবৃত্তি হবে।’ এর আগে গত জানুয়ারিতে মেদভেদেভ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া পরাজিত হলে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করতে পারে তার দেশ। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মেদভেদেভ সে সময় বলেন, ‘পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো বড় ধরনের সংঘাতে কখনোই হারেনি। কারণ এর ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করে।’ এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক ওয়ারহেডের দখল রয়েছে। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেবল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে রয়েছে। রাশিয়ার ওপর প্রচলিত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ন্যাটোর থাকলেও পারমাণবিক অস্ত্রের হিসেবে ইউরোপের জোটের তুলনায় মস্কোর পারমাণবিক শক্তি বেশি রয়েছে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলা হয়ে থাকে দিমিত্রি মেদভেদেভকে। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেদভেদেভ রাশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে ভয়াবহ এক সংঘাত এবং ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর মস্কো ও পশ্চিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের সূত্রপাত করেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র পাঠাচ্ছে রাশিয়া : এদিকে বেলারুশ নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তাদের ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্র পাঠানো শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মস্কো সফরকালে লুকাশেঙ্কো সাংবাদিকদের জানান, ‘পরমাণু হস্তান্তর শুরু করা হয়েছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে রাশিয়ার এমন পদক্ষেপকে ‘দায়িত্বহীন এবং উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের আরেকটি উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
তবে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব পরমাণু অবস্থানের সামঞ্জস্য করার কোনো কারণ দেখি না বা বেলারুশ থেকে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত এমন কোনো ইঙ্গিতও আমরা দেখিনি।’
এদিকে পরমাণু অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানে সহায়তার অংশ হিসেবে লুকাশেঙ্কো মস্কোকে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। গত মার্চ মাসে পুতিন বলেছিলেন যে, তিনি বেলারুশে ‘কৌশলগত’ পরমাণু অস্ত্র স্থাপন করবেন। পুতিনের এমন ঘোষণার পশ্চিমা বিশ্ব কঠোর নিন্দা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে ৩০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার দেবে
মার্কিন প্রশাসনের গতকাল ইউক্রেনের জন্য ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তার আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণা করবে। প্যাকেজটিতে হিমার্স লঞ্চার এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের জন্য গাইডেড মাল্টিপল লঞ্চ রকেট অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এগুলো পেন্টাগনের কোষাগার থেকে সরবরাহ করা হবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং অন্যান্য রুশ কর্মকর্তারা বারবার অস্ত্র অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ সতর্ক করেছেন ইউক্রেনের পশ্চিমের সামরিকীকরণ সরাসরি ইউরোপীয় এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুঁমকিস্বরূপ। সূত্র : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।