ঢাকা ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হিলির লোহার খনি

আবার খনি কার্যক্রম শুরু কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশা

আবার খনি কার্যক্রম শুরু কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশা

দিনাজপুরের হিলির আলিহাটে আবিষ্কৃত দেশের একমাত্র লোহার খনি থেকে লোহা উত্তোলনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ড্রিলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) তত্তাবধানে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে আবারো খনির কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এলাকার উন্নয়ন ও বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়রা। দ্রুত যেন লোহার খনি বাস্তবায়ন করা হয় এ দাবি তাদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হিলির আলিহাট এলাকায় জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি) নামের একটি সংস্থা প্রথম ড্রিলিং কার্যক্রম শুরু করে। এক বছরের মাথায় এখানে লোহার খনির অস্তিত্ব পায় সংস্থাটি। ২০২০ সাল পর্যন্ত ওই এলাকার চারটি স্থানে ড্রিলিং কার্যক্রম পরিচালনা করে ৪০৮-৬৩২ মিটার গভীরতায় তিনটি স্তরে ৬৮ মিটার পুরু ও পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৬২৫ মিলিয়ন টন লৌহ আকরিকের সন্ধান মেলে। এছাড়া নিকেলসহ চুনাপাথরের সন্ধানও পান সংস্থাটির গবেষকরা। সে জরিপের পূর্ণাঙ্গতা যাচাই করতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি দ্বিতীয় পর্যায়ের জরিপের কাজ শুরু করেছে। দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক এ ড্রিলিং কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এখন আবার খনির কাজ শুরু হয়েছে। এতে করে আমরা এলাকাবাসী অনেকটাই আশাবাদী। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন বলেন, এখানে লোহার খনি বের হয়েছে জেনে আমি আনন্দিত। এ লোহার খনি যদি দ্রুত বাস্তবায়ন হয় তাহলে এলাকার জায়গা-জমির দাম বাড়বে, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এ আলিহাট গ্রামকে দেশের মানুষ এক নামে চিনবে- জানবে, গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তরিত হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ লোহার খনি দেখতে এ আলিহাটে আসবে। এলাকার মানুষজন এখানে কাজ পাবে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালে হিলির আলিহাট এলাকায় জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি) চারটি বোর হোল ড্রিলিং কার্যক্রম করে। তারা এ ড্রিলিং কার্যক্রম পরিচালনা করে ৪০৮-৬৩২ মিটার গভীরতায় তিনটি স্তরে পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে লৌহ আকরিকের সন্ধান পায়। এ সময় তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন ৬৮ মিটার পুরু ও ৬২৫ মিলিয়ন টন লৌহ আকরিকের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সে সময় নিকেলসহ চুনাপাথরের সন্ধান পান তারা। সে জরিপের পূর্ণাঙ্গতা যাচাই করতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) দ্বিতীয় পর্যায়ের জরিপের কাজ শুরু করেছে। এ পর্বে আমরা ছয়টি বোর হোল ড্রিলিং করব। এর মাধ্যমে আমরা এখানে আরো নিশ্চিত হতে চাই যে, এখানে লোহার আকরিকের মজুদ রয়েছে এবং তা কত গভীরতায় রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এটা দেখা যায় যে এটা ফিজিবল। এখান থেকে আহরিত লোহার আকরিকের পরিমাণ ভালো, কোয়ালিটি ভালো, সে সঙ্গে এটি এক্সট্রাকট করা আমাদের জন্য ফিজিবল হবে সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। জিএসবি ড্রিলিং কার্যক্রম করে নিশ্চিত হয়েছিল যে এখানে লোহার আকরিকের অস্তিত্ব রয়েছে। আমরা ছয়টি বোর হোল ড্রিলিং করে আরো বেশি আশা করছি যে, এখানে প্রকৃতপক্ষেই লোহার আকরিক থাকতে পারে বা আছে। এখানে আয়রনের ভালো মজুদ রয়েছে। এটির ওপর ভিত্তি করেই আমরা প্রিলিমিনারি স্টাডি করছি। যেন পরবর্তী সময়ে এটি নিয়ে আমরা ভালোভাবে এগোতে পারি। দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক বলেন, আমাদের এ প্রজেক্ট কিন্তু লস প্রজেক্ট নয়। এটি একটি সম্ভাবনাময় ও লাভজনক প্রজেক্ট। এখানে ৬৫ ভাগ থেকে শুরু করে কোথাও ৭০ ভাগ লোহার মজুদ রয়েছে।

এখানে ৬২৫ মিলিয়ন টন লোহার আকরিক রয়েছে যা দিয়ে দেশের প্রায় ৩০ বছরের আয়রনের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এ খনিতে শুধু লোহা নয়, এখানে নিকেলসহ আরো কয়েকটি ধাতু রয়েছে। যেগুলো অনেক মূল্যবান। বিশ্বে এসব ধাতুর চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। এখানে লোহার খনি বাস্তবায়ন হলে শুধু হাকিমপুর বা দিনাজপুরের মানুষ নয়, দেশের মানুষ উপকৃত হবে। আশা করছি, শিগগিরই যথাযথ জরিপের ভিত্তিতে আমরা খনি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত