ঢাকা ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজবাড়ীর জুটপণ্য যাচ্ছে বিশ্বের ২৬টি দেশে

রাজবাড়ীর জুটপণ্য যাচ্ছে বিশ্বের ২৬টি দেশে

রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভবদিয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে গোল্ডেন জুট প্রোডাক্টস কারখানা। এখানে পাট, কচুরিপানা, হোগলাপাতা, ধানের খড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে নার্সারি পট, ফ্লোর ম্যাট, প্লেস ম্যাট, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ঝুরি, টিফিন বক্স, পেট হাউস, টিস্যু বক্স, ফাইল বক্স, ট্রে, ফুল ঝুরিসহ প্রায় শত ধরনের পরিবেশবান্ধব পণ্য। দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিশ্বের ২৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত প্রতিবন্ধী, বিধবা, হতদরিদ্র নারীসহ দুই হাজার শ্রমিক হয়ে উঠেছেন আত্মনির্ভরশীল। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ে নারীরা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। কারখানাটিতে নারীদের পাশাপাশি কাজ করছে অনেক পুরুষও।

কারখানাটিতে কর্মরত শ্রমিক আমেনা বেগম বলেন, তার স্বামী একজন দিনমজুর। করোনার সময় তাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। দুই বছর আগে এ মিলে চাকরি নেন। এখন তার সাংসারিক অবস্থা খুবই ভালো। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারছেন। দুয়েকটা শখের জিনিসও কিনতে পারছেন। অভাব অনটন এখন আর নেই। আরেক শ্রমিক ময়না খাতুন বলেন, এখানে অনেক ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। আমরা মিনি বালতি, লন্ডিবক্স ও সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করি। আমাদের মতো অনেক নারী এখানে কাজ করছে। আমরা এখানে কাজ করে সংসারের অভাব দূর করতে পারছি।

নাজমা আক্তার বলেন, এই কারখানায় কাজ করার আগে সংসারের কাজ শেষে বাড়িতে বসে থাকতেন। তার স্বামীর উপার্জনের টাকায় সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হতো। অভাব অনটন লেগেই থাকতো। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ দিতে পারতাম না ঠিকমতো। তিন বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করছি। সংসারের অভাব দূর হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার খরচও সময়মতো দিতে পারছি।

জানা যায়, ২০০৭ সালে ঢাকার সাভারে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হাকিম আলী সর্দার ছোট পরিসরে গোল্ডেন জুট প্রডাক্টস কারখানাটির কার্যক্রম শুরু করেন। পরে ২০১৫ রাজবাড়ী সদরের ভবদিয়া গ্রামে বৃহৎ পরিসরে এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাট, হোগলাপাতা, ধানের খর, কচুরিপানা সংগ্রহ করে প্রায় একশত ধরনের পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা হয়। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে নেদারল্যান্ড, আমেরিকা, তুরষ্ক, সৌদি আরব, জাপান, হংকং, মালয়েশিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ডসহ ২৬টি দেশে।

গোল্ডেন জুট প্রডাক্টসের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে জীবন জীবীকা নির্বাহ করছেন কয়েকজন শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিধবা, হতদরিদ্র নারী ও পুরুষ। কারখানাটিতে বর্তমানে শ্রমিকের সংখ্যা আটশ’।

তবে বাড়িতে বসে ঘরের কাজের পাশাপাশি পাটজাত পণ্য তৈরি করছে প্রায় ১২শ’ জন। এতে করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে গ্রামীণ পর্যয়ে বহু নারী। রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের দেশে পাটের পণ্য সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা হতো তেমনি পাটচাষিরাও লাভবান হতে পারত। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরের সহকারী মহাব্যবস্থাপক, চয়ন বিশ্বাস বলেন, বিসিক একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন কারিগরি সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের রাজবাড়ীতে পাট এবং হোগলাপাতা দিয়ে কারখানা তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রায় সাতশত মানুষের কাজের সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে সেখানে প্রান্তিক নারী কাজ করছে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমরা সব সময় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সেই সঙ্গে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত