নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড

দূর হয়েছে মঙ্গা, বদলে গেছে মানুষের ভাগ্য

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পারভেজ উজ্জ্বল, নীলফামারী

এমন একটা সময় ছিল যখন নীলফামারীতে বেশিরভাগ মানুষ তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারত না। তখন এই অঞ্চলের একটি মানুষের দৈনিক আয় ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এ অঞ্চল ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। বছরের বেশিরভাগ সময় কৃষিকাজ না থাকায় বেকার থাকত অধিকাংশ মানুষ। এই বেকারত্বের ফলে দেখা দিত খাদ্যাভাব। নীলফামারী জেলা মঙ্গাকবলিত অঞ্চল বলেই বেশি পরিচিত ছিল। তবে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় বদলে গেছে মঙ্গাকবলিত নীলফামারী জেলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনমান। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে উত্তরের এই জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় মাঝারি শিল্প কলকারখানা। অভাব শব্দটি এখন নেই বললেই চলে।

সূত্রমতে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলের মঙ্গা দূর করতে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রায় ২১৪ একর জমিনে গড়ে তোলা হয় এই ইপিজেড। ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সারা জেলায় গড়ে উঠছে ছোট বড় মাঝারি শিল্প কলকারখানা। যেসব কারখানায় কাজ করছেন এ অঞ্চলের লক্ষাধীক নারী-পুরুষ। এতেই বদলে গেছে নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা। এবং মিলেছে অর্থনৈতিক মুক্তি। মোট ১৯০টি প্লটের মধ্যে ১৫৪টি প্লটে ২৪টি দেশি-বিদেশি কোম্পানির কারখানা আছে উত্তরা ইপিজেডে। জুতা তৈরি, চশমা, কুটির শিল্প, পরচুলাসহ ছোট বড় প্রায় ৬০টি কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিক হিসেবে শতকরা ৭৫ শতাংশ নারী শ্রমিক। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কারখানাগুলোতে দক্ষ জনশক্তি, সুন্দর পরিবেশ থাকার কারণে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়ার ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। বাড়ছে শ্রমিকের চাহিদাও। এভারগ্রিন পরচুলা কোম্পানিতে কাজ করেন শাহজাদী বেগম। চাকরির আগে সংসারে এতো অভাব ছিলো যে, কোনো কোনো বেলা না খেয়ে অনাহারে থাকতে হতো, কিন্তু এখন চাকরি করার কারণে ব্যাংকে টাকাও জমা করছেন। ভ্যানচুরা কারখানার শ্রমিক খোদেজা বেগম জানান, প্রতি মাসেই বেতন হয়, বেতন নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই।

কেবিসি কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবকিছুই সহজলভ্য হচ্ছে। চিলাহাটি স্থলবন্দর পুরোপুরি চালু হলে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে এবং আরো সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি প্রকৌশলী এসএম শফিকুল আলম ডাবলু আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, শিল্প উন্নয়নে একের পর এক সম্ভাবনার পথ তৈরি করে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। আর এই শিল্প কলকারখানাগুলো এই জেলার পরিবর্তন এনেছে।

নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড মঙ্গাকবলিত উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূর করতে সহায়তা করেছে। আর সবচেয়ে বড়কথা এই জেলায় রাজনৈতিক কোনো ঝামেলা নেই। তাই বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, নীলফামারী সদর উপজেলার উত্তরা ইপিজেডসহ সৈয়দপুর, জলঢাকা, ডোমারে কলকারখানা গড়ে ওঠার ফলে আশপাশের জেলার সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাইপলাইনে গ্যাস এবং চিলাহাটি স্থলবন্দর পুরোপুরি চালু হলে এই এলাকার শিল্পের আরো ব্যাপক বিকশিত হবে।