ঢাকা ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা

২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা

নওগাঁর সাপাহার বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমি আম। দিনে দিনে জমে উঠতে শুরু করেছে আমের বাজার। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত আমের বাজার। সেইসঙ্গে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে আড়তগুলোতে। দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে আমের বৃহৎ বাজার জেলার সাপাহার উপজেলা। কিছুদিন আগেও বাজারে ছিল সুনসান নীরবতা। গুটি (আটি) আম পাড়া শুরু হলেও বাজার তেমন সরব ছিল না। তবে গোপালভোগ আম বাজারে আসার পর থেকে সরব হয়ে উঠেছে বাজার। ভোর থেকে শুরু হয় আম পাড়া। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যান, ভটভটি ও অটোরিকশাযোগে বাগানের আম চলে যাচ্ছে বাজারে। সাপাহার উপজেলা সদরের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে সাপাহার-নজিপুর সড়কের প্রায় ৫০০ ফুট জায়গাজুড়ে প্রখর রোদে চাষিরা আম বিক্রি করার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। দরদাম করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আড়তে। তবে আগামী কিছুদিন পর জিরো পয়েন্ট থেকে সাপাহার-নজিপুর সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে আমের বাজার বসবে। এ সড়কে দুই পাশে রয়েছে প্রায় ২৫০টির মতো আড়ত।

উপজেলার আমইড় গ্রামের আমচাষি গোলাম রাব্বানী বলেন, ১৪০০-১৪৫০ টাকা মণ দরে আম বেচা-কেনা হচ্ছে। উপজেলা দিঘিরহাট গ্রামের আমচাষি ফয়জুল কবির বলেন, গোপালভোগ, ফজলি, ল্যাংড়া ও হিমসাগর/খিরসাপাত জাতের আমের ৫ বিঘা বাগান নিয়েছি। গোপালভোগ জাতের আম প্রথম বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতিমণ আম ১১০০-১২০০ টাকা মণ বলছে। এ বছর অনাবৃষ্টি হওয়ায় আমের পরিচর্চা করতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। উপযুক্ত দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে।

একই গ্রামের আলম হোসেন বলেন, আমের দরদাম করে আড়তে নিয়ে যাওয়ার পর ৫০-৫২ টাকা কেজিতে মণ হিসেবে দিতে হচ্ছে। আর একবার আম আড়তে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। আবার একই বাগানের আম সকালে এক দাম, বিকালে আরেক দাম। তবে সাধারণত বিকালে মণে ৩০০-৪০০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়। এটা ব্যবসায়িদের একটা কারসাজি। আমের দাম এবং মণের হিসেব দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সাপাহার আড়তদার সমিতির সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, বাজারে গুটি, রানিভোগ, গোপালভোগ আম উঠতে শুরু করেছে। রানিভোগ ও গোপালভোগ ১২০০-১৫০০ টাকা, গুটি ৮০০-৯০০ টাকা, হিমসাগর ১৫০০-১৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আমের মণ হিসেবে ৪৮-৫০ কেজিতে মণ বিক্রি হয়। এরমধ্যে ক্যারেটের ওজন থাকে। ওজনে বেশি থাকলেও পরে রস কমে ও অনেকটা নষ্ট আম বাদ গেলে ওজন স্বাভাবিকে চলে আসে। প্রতিদিন কয়েকটি আড়তে প্রায় ৯০০-১০০০ হাজার মণ আম বেচাকেনা হচ্ছে। আর কিছুদিন পর বাজারে আমের সরবরাহ বাড়লে সবগুলো আড়ত চালু হবে। কর্মব্যস্ত হয়ে পড়বে আড়তগুলো। বর্তমানে বাজারে লিচু ও তাল থাকায় আমের দাম কিছুটা কম। আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে লিচুর বাজার শেষ হলেই আমের দাম বাড়বে। জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে বেঁধে দেয়া সময়সূচি অনুযায়ী গত ২২ মে গুটি (স্থানীয়) আম পাড়ার মধ্য দিয়ে আম নামানো শুরু করে আমচাষিরা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- তালিকা অনুযায়ী গুটি (স্থানীয়) আম ২২ মে থেকে পাড়া শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চাষিরা বাগান থেকে আম পাড়বেন। জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। এ বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত