বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, সাংবাদিকদের স্বার্থ ও মর্যাদা সংরক্ষণে রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। এমনকি বাংলাদেশই সবার আগে প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছিল। পার্শ্ববর্তী ভারত কয়েক বছর পরে এবং পাকিস্তানে আরো অনেক পরে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তখনকার একনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতায় সাহসী ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকদের সম্মান ও মার্যাদা রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্যই বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গঠন করে দিয়েছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ বা কাউকে সম্মানহানি করার চেষ্টা করলে প্রেস কাউন্সিলে মামলা দায়ের করলে, তদন্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল তিরস্কার করা। তিনি আরো বলেন, এই তিরস্কার শাস্তিই যেন তখন একজন সাংবাদিকের জন্য বড় অসম্মান বা লজ্জাস্কর শাস্তি ছিল। কিন্তু এখনকার কথা বলাই বাহুল্য, কাউকে এমন শাস্তি দেয়া হলে হাসতে হাসতে বের হয়ে যান। যেন কিছুই হয়নি তার। তাই এই শাস্তির বিষয়টি যুগোপযোগী করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশের প্রকৃত সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, সাংবাদিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতার বাইরে। তাই সদিচ্ছা থাকলেও কোনো সমাধানের উপায় থাকে না। ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের অক্ষমতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এখন ক্ষমতা নেই, তবে আগামীতেও থাকবে না, সেটা নয়। একসময় সাংবাদিকদের সব বিষয়ে তদারকি ও সমস্যা সমাধানে প্রেস কাউন্সিল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তিনি এসব বাস্তবায়নে সাংবাদিকদের আন্তরিক সহযোগিতাও কামনা করেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম আরো বলেছেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে গ্রেপ্তারসহ নানা রকম হয়রানির শিকার হয়। প্রেস কাউন্সিলের মামলা গ্রহণ বা কোন আদালতে মামলা হবে তা সুপারিশের ক্ষমতা থাকলে সাংবাদিকরা হয়রানি হতো না। তাই এখন বলা হচ্ছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হবে তা, প্রেস কাউন্সিলে হোক। তবে এতে লিগ্যাল কতোগুলো বাধা আছে। সব অপরাধের বিচার প্রেস কাউন্সিলে হবে না। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তা প্রথমে প্রেস কাউন্সিলে হবে। পরে প্রেস কাউন্সিল দেখার পর মামলাটি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাবে। গতকাল সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আয়োজনে ‘প্রেস কাউন্সিল আইন-১৯৭৪ ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন’ সম্পর্কিত সেমিনার ও মতবিনিময় সভা সেমিনারের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। সাংবাদিকদের আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন বিষয় তুলে ধরেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব মাসুদ খান। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার মো. ওহিদুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ। বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুল হুদা অলক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু, সহ-সভাপতি রফিকুল আরম, সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক চাঁপাই দৃষ্টির সম্পাদক এমরান ফারুক মাসুম, সাংবাদিক আজিজুর রহমান শিশিরসহ অন্যরা। এ সময় জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।