প্রস্তাবিত তামাক কর
তরুণ সমাজকে তামাকপণ্য থেকে বিরত রাখতে সহায়ক নয়
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক পণ্যের দাম বাড়ানো হলেও মূল্যবৃদ্ধির হার হতাশজনক বলে মনে করছেন তরুণরা। তারা বলেছেন, এই বাজেট তামাকমুক্ত তরুণ সমাজ গঠন ও প্রধানমন্ত্রীঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠনের অন্তরায়। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর শ্যামলীর ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের অর্কিড রুমে আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং আয়োজিত ঘোষিত জাতীয় বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে তরুণরা বলেন, বর্তমানে সিগারেটের বাজারে ৭৫ শতাংশই নিম্নস্তরের দখলে, যার প্রধান ভোক্তা মূলত দরিদ্র ও তরুণ জনগোষ্ঠী। নিম্নস্তরে শলাকাপ্রতি ৫০ পয়সা মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র ও তরুণ জনোগোষ্ঠীকে কোনোভাবেই সিগারেটে নিরুৎসাহিত করবে না। কেন না, মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে প্রকৃত অর্থে সিগারেটের দাম বিগত বছরের তুলনায় কমে গেছে। এতে করে সস্তা সিগারেটের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। এবং তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বহুগুণে বাড়বে। সংগঠনটির সমন্বয়ক মারজানা মুনতাহা জানান, করহারের ক্ষেত্রে নিম্নস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৮% করা হয়েছে, যদিও ৬৫% করহারের যে সুপারিশ বিশেষজ্ঞরা দিয়েছিলেন তা আমলে আনা হয়নি। অন্যান্য স্তরে করহার ৬৫%-এ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, শলাকা প্রতি ৫০ পয়সা বাড়লেও ভাংতি জটিলতায় বাজারে বিক্রয় হবে মূলত ১ টাকা বাড়িয়ে। এতে করে বাড়তি মুনাফার সুযোগ পেয়ে লাভবান হবে কোম্পানি, আর বাড়তি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।
সংগঠনটির আরেক সদস্য তাসনিম হাসান আবির জানান, তরুণরা মারাত্মকভাবে ই-সিগারেটে আসক্ত এবং এর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। প্রস্তাবিত বাজেটে ই-সিগারেট আমদানি কর বাড়িয়ে ২১২ শতাংশ করা হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে, এই পদক্ষেপের ফলে স্বাস্থ্য ক্ষতির বিবেচনায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধের যে সুপারিশ বিশেষজ্ঞ মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছিল, তা বাস্তবায়িত হলো না বরং পক্ষান্তরে এটা বৈধতার দিকেই এগুলো; যা হতাশাজনক। এ সময় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং তিনটি বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করে। প্রস্তাবগুলো হলো -
১। সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা। ২। ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা। ৩। জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০%) প্রচলন করা। ৪। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া দ্রুত পাস করতে হবে।
দেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ তরুণ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে তামাকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে হলে তামাক পণ্যের ওপর অধিক হারে করারোপ করতে হবে ও তরুণ সমাজকে কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং।