ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাওয়াই নদীতে কাঠের সেতু

বদলে যাচ্ছে হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা

বদলে যাচ্ছে হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা

পঞ্চগড়ের চাওয়াই নদীতে দুইটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু দুইটি নির্মাণের ফলে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমেছে সেতুর দুই পাড়ের কয়েক গ্রামের মানুষের। ফলে বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রাও।

জানা যায়, বর্ষাকালে নদীতে ভরা পানি থাকায় অস্বাভাবিক দুর্ভোগে পড়তে হতো দুই পাড়ের মানুষকে। ওই সময় অনেকটা পানিবন্দি জীবনযাপন করতে হতো তাদের। শুকনো মৌসুমে হাঁটুপানি পাড়ি দিতে হতো স্থানীয়দের। কাজের সন্ধানে শহরে যেতে পাড়ি দিতে হতো ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ। এতে হাটুগলা নদী পার হতে সঙ্গে নিতে হতো আলাদা কাপড়ও। এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে নদীপাড়ের মানুষগুলো চাওয়া ছিল এই সেতুটি।

সম্প্রতি সদর উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে রাজারপাট ডাঙ্গার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের নদী পারাপারের জন্য চাওয়াই নদীর উপর ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু। এ সেতু ব্যবহার করতে পারছেন রাজারপাট ডাঙ্গা এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারাও।

১৯৯৮ সালে সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য স্থায়ী ঠিকানা গড়ার লক্ষ্যে সদর উপজেলার আমতলা এলাকায় চাওয়াই নদীর ওপারে রাজারপাট ডাঙ্গা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা নিজস্ব ঠিকানা খুঁজে পেলেও সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের। দীর্ঘদিন পর তাদের কষ্ট লাঘব হওয়ায় আনন্দিত তারা।

এদিকে একই নদীর উপর জেলার সাতমেরা ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি কাঠের সেতু। যদিও সেতুটি আগেই নির্মাণ করা ছিল। তবে সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে। এ সেতুর ফলে নদীপাড়ের সাত থেকে আটটি গ্রামের মানুষ চলাচল করতে পারছে। তবে এ সেতু দিয়ে ভারী কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পারায় আগামীতে ভারী যানবাহন চলাচল করার জন্য ভালো একটি সেতু চান এলাকাবাসী।

রাজারপাট ডাঙ্গা এলাকায় নদীর সেতু ঘুরে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে ওপারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় বুক পানি পেরিয়ে এ নদী পার হতে হতো। অনেক সময় নৌকা দিয়ে পার হতে হতো। এখন কাঠের ব্রিজ পেয়ে আনন্দিত তারা।

স্থানীয় বৃদ্ধ আব্দুর রহমান বলেন, এখানে কাঠের সেতু নির্মাণ করায় প্রশাসনকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। খুব কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের। নৌকা দিয়ে, কখনো সাঁতার কেটে কিংবা বুক পানি পেরিয়ে নদী পার হয়ে শহরে যেত হতো। এখন সেতুতে যেতে পারছি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা এসএসসি পরীক্ষার্থী আইনুল ইসলাম বলেন, এখানে কাঠের সেতু নির্মাণ হওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত। আমি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। আগে সাতার কেটে স্কুল যেতে হতো। এখন সেতু হওয়ায় খুব সহজেই স্কুলে যেতে পারছি। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী ও আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের দুর্ভোগ কমেছে। এজন্য ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

এদিকে, সাতমেরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ার শাহিনুর রহমান বলেন, এ সেতু আমাদের কয়েক গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে। তবে কোনো ভারী যানবাহন চালাতে পারছি না। আগামীতে যদি ভারী যানবাহনের জন্য সেতু নির্মাণ করে দেয়া হয় তাহলে ভালো হবে। তবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুল হক বলেন, সদর উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে রাজারপাট ডাঙ্গার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষদের নদী পারাপারের জন্য ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চাওয়াই নদীর উপর কাঠের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে পর্যটক আকর্ষণে পঞ্চগড়ের যে পাঁচটি গড় রয়েছে, সেসব গড়ের নামানুসারে পর্যটকদের জন্য বসার স্থান করে দেয়া হবে। কারণ, তার পাশেই শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ চলছে। এতে করে পর্যটন শিল্পের যেমন প্রসার ঘটবে, তেমনি এখানকার মানুষদের জীবনমান বদলে যাবে। একইভাবে সাতমেরা ইউনিয়নে আরেকটি কাঠের সেতু সংস্কার করা হয়েছে।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় স্থায়ী ঠিকানা করে দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে আমরা উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের উদ্যোগে রাজারপাট ডাঙ্গা এলাকায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেছি। সেরকমই সাতমেরা ইউনিয়নে আরেকটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছেন নদেীপাড়েরর হাজার হাজার মানুষ। সেখানকার শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে, পড়ালেখা করতে পারছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত