ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ ভূমি থাকলেও ঢাকায় ৭ শতাংশ’

‘আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ ভূমি থাকলেও ঢাকায় ৭ শতাংশ’

একটি আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ ভূমি থাকা প্রয়োজন হলেও ঢাকায় তা অর্ধেকেরও কম। বর্তমানে ঢাকায় সবুজ ভূমি রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ, যার অন্যতম কারণ সমন্বয়হীন উন্নয়ন। এক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), পরিকল্পনা কমিশন, এলজিইডি, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, এনএইচএ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নয়ন সহযোগীসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হবে। নির্ধারিত এলাকায় উন্নয়নকালে সবুজ ভূমি সংরক্ষণ ও বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব না দেয়াও একটি কারণ। গতকাল শনিবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি অডিটোরিয়ামে গোলটেবিল আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। এ সময় গত ২৮ বছরের রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন। আলোচকরা বলেন, নগরীর উন্নয়নযজ্ঞ তথা পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পে কনক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। খেলার মাঠ দখল করে তৈরি হচ্ছে ক্লাব, মার্কেট, হাটবাজারসহ নানা স্থাপনা। সবুজ ভূমি রক্ষায় সমাধানের কথা জানিয়ে বলা হয়, ড্যাপে বর্ণিত ‘নগর জীবনরেখা’ বাস্তবায়নের লক্ষে নগরের সবুজায়ন নিশ্চিত করতে হবে। শহরের জলাধার ও সবুজ এলাকা রক্ষা করার উদ্দেশ্য জলাধার সংলগ্ন জায়গাগুলোতে পাবলিক স্পেস তৈরি করতে হবে। এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়নকে নিরুৎসাহিত করে অবশিষ্ট সবুজ ভূমি রক্ষা করতে হবে।

সবুজ ভূমি সংরক্ষণে স্টেকহোল্ডারদের মৌলিক কার্যাবলীর কথা জানিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, পার্ক এবং খোলা জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। রাজউক যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ইমারত ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দিতে হবে। নির্মাণ অনুমতিপত্র ও অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। বন বিভাগের মৌলিক কাজ জানিয়ে বলা হয়, বনসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার সাথে জীববৈচিত্র্য ও জলাশয় ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত করতে হবে। ন্যাশনাল হাউজিং অথোরিটির উদ্দেশ্য করে বলা হয়, হাউজিং প্রোজেক্টে সবুজ ভূমির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরে মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু পার্ক এবং খোলা জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ করা। পরিকল্পনা কমিশন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী দেশের অর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। মধ্যমেয়াদি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তাত্ত্বিক কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে।

এলজিইডি মৌলিক কার্যাবলী জানিয়ে বলা হয়, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পাদক উন্নয়ন, উৎপাদিত কৃষি ও অকৃষি পণ্য পরিবহন ও এর সুষ্ঠু বিপণনে গ্রামীণ সঠিক অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। পরিবেশ অধিদফতর পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সক্ষমতা তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, মতবিনিময় সভা ইত্যাদি আয়োজন ‘গ্রিন গ্রোথকে’ উৎসাহিত করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল এনজিও এসডিজি নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা জরুরি। স্থানীয় এনজিও, এসডিজি ও দেশীয় টার্গেট নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।

সামাজিক সংগঠনের ভূমিকা জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে পরিবেশের আরো অবনতির প্রক্রিয়া বন্ধ করা, যেখানে সম্ভব, পরিবেশের যে ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়েছে তা রোধ করতে হবে। গণমাধ্যমের ভূমিকা জানিয়ে বলা হয়, সবুজ ভূমি সংলগ্ন উন্নয়ন, অবনতি, পর্যবেক্ষণ করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত গ্রহণ এবং প্রচার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবুজ ভূমির ব্যবহার সংরক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য বিভিন্ন গবেষণা করা এবং পরামর্শ দিতে হবে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রতিনিধি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল, সোসাইটি অব এক্সপার্টস অন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট (সীড) সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ ডিন ড. ইশরাত ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (বাস্থই) সহ সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকী, স্ট্যামর্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন ও সভাপতি অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি অমিতোষ পাল, সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল মামুনসহ আরো অনেকেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত