ঢাকা ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধরাছোঁয়ার বাইরে বিএনপি নেতা খোকন

ধরাছোঁয়ার বাইরে বিএনপি নেতা খোকন

নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি বিএনপির যুগ্মণ্ডমহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে গত শনিবার সদর মডেল থানায় এ হত্যা মামলায় খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়।

এই মামলায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন ভুঁইয়ার সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও সদস্য সচিব রিফাতের বিরোধ চলে আসছিল। বিএনপির যুগ্মণ্ডমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রকাশ্যে নাহিদ ও রিফাতকে সমর্থন দিয়ে আসছে। কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতরা নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও আন্দোলন করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ মে দুপুরে নিহত সাদেক ও মাঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে পিক-আপ ও ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা।

পরবর্তীতে বিক্ষোভ মিছিলটি ভেলানগর পার হয়ে চিনিশপুর সড়কে প্রবেশ করা মাত্রই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করে। পরে তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করে। ওই সময় সন্ত্রাসীরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করে মাথায় গুলি করে। এ ঘটনায় আশরাফুল নামে আরো একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাদেকুর রহমান মারা যান। এর ১ দিন পর শুক্রবার (২৬ মে) সকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যায়।

এলাকায় খবর নিয়ে জানাযায়, খায়রুল কবির খোকনের প্রত্যক্ষ মদদে ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের ধারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খায়রুল কবির খোকন দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদীর রাজনীতিতে অস্ত্রের রাজনীতি করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময় বিভিন্ন কমিটি দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা হলে ত্যাগী নেতা মৃত সাদেক ও মৃত আশরাফুল বাদ পড়ে। তারা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে খায়রুল কবির খোকন তাদের মৃত্যুর হুমকি দেন। একপর্যায়ে খায়রুল কবির খোকনের হুকুম ও প্রত্যক্ষ নির্দেশে তার মদদপুষ্ট জেলা ছাত্রদল নেতা নাহিদের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিনের টাকার বাণিজ্য ও ক্ষমতার লোভ লালসায় দিন দিন নরসিংদীর রাজনীতিতে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। খায়রুল কবির খোকন একজন অস্ত্রবাজ সন্ত্রাস, তার বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে বলে অনেকে বলছে। নরসিংদীর সাধারণ জনগণ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে জিম্মি।

উল্লেখ, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে ছাত্রদলের সভাপতি, মাঈনুদ্দিন ভুঁইয়াকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রদলের ৫ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর থেকে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। এই জেরে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকনের চিনিশপুরের বাসভবন তথা জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে একাধিকবার হামলা ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত