ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আলোচনায় তথ্যমন্ত্রী

পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে

পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে পরের প্রজন্মের কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রয়াস দরকার। পরিবেশ, প্রকৃতি সংরক্ষণ, বন সৃজন অন্য কারো জন্য নয়, নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই করা প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’

মন্ত্রী গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিশেষ অতিথি এবং সচিব ড. ফারহিনা আহমদ স্বাগত বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমাদের নিত্য সঙ্গী। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশে দৃশ্যমান। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে পরিবেশ সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমাদের সরকার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় সেই দুরূহ কাজ করতে গিয়ে অনেক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশ্বের সর্বোচ্চ পদক ‘চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে, যা জাতির জন্য বিপুল সম্মান ও স্বীকৃতির পরিচায়ক।

পরিবেশবিদ ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করেছেন সে উদাহরণ হচ্ছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ, মাথাপিছু সর্বনিম্ন কৃষি জমি এবং আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯২তম দেশ হওয়া সত্ত্বেও ধান ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ছোট্ট একটি দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনন্য ব্যবস্থাপনাতেই এটি সম্ভবপর হয়েছে।

২০০২ সাল থেকে দশ বছর আওয়ামী লীগের প্রথম পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী হাছান মাহমুদ এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বিট প্লাস্টিক পলুশন, ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন’ অনুসারে প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বছরে পৃথিবীতে ৪০০ মিলিয়ন টন এবং এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ৩ হাজার টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয় এবং বিশ্বব্যাপী ১১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়। এ অবস্থা চললে বিশেষজ্ঞদের মতে ৫০ বছরে অনেক জায়গা মৎস্যশূন্য হয়ে যাবে, থাইল্যান্ডের সমুদ্র অনেকটা মৎস্যশূন্য হয়ে গেছে। আবার প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ’ প্রজাতির প্রাণী প্রায়বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে প্রায় ১৩৭টি প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণে।

পরিবেশের এসব বিপর্যয় রোধে সম্প্রচারমন্ত্রী সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিবেশ সচেতন। আসুন সবাই মিলে দেশ গড়ি, পরিবেশ রক্ষা করি এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করি।’

পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করে জানান, প্লাস্টিক দূষণ রোধে দশ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বর্তমান ২২.৩৭ ভাগ থেকে ২৫ শতাংশে এবং বন ভূমির পরিমাণ ১৪.১ ভাগ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে দেশব্যাপী সবার অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্বের সামনে পরিবেশগত তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হারানো এবং প্লাস্টিক বিস্ফোরণের অভিঘাত মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশও এই অভিঘাতের বাইরে নয়। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজা ও বগুড়ার বাংলাদেশ বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ফেডারেশন সভাপতি ড. এসএম ইকবালকে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন অ্যাওয়ার্ড ২০২২ দেয়া হয়।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবানন্দ রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম মফিজুল ইসলাম, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিকে (বেডস) দেয়া হয় জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২২।

পাশাপাশি ৬টি শ্রেণিতে নির্বাচিত ১৮ জনকে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১ এবং সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ লভ্যাংশপ্রাপ্ত ৫ জন মহিলা ও ৫ জন পুরুষকে পুরস্কৃত করেন প্রধান অতিথি পরিবেশবিদ ড. হাছান মাহমুদ।

সভা শেষে তথ্যমন্ত্রী কনভেনশন সেন্টার সংলগ্ন শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা উদ্বোধন করেন এবং অতিথিবৃন্দকে নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। পরিবেশ মেলা ১১ জুন পর্যন্ত এবং বৃক্ষমেলা প্রথমে ২৬ জুন পর্যন্ত এবং ঈদের পর ১ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা অবধি উন্মুক্ত থাকছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত