গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিক আনারস চাষ
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শেরপুর প্রতিনিধি
আনারসের রাজধানী মধুপুর। এ মধুপুরের আনারসের রসালো স্বাদ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তবে এবার দেশের উত্তর সীমান্তের জেলা শেরপুরের গারো পাহাড়ে সেই মধুপুরের রসালো আনারসের স্বাদকে ছাড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে আনারস চাষ। মধুপুরের আনারস চাষি পিটার ডালবট নামে এক গারো আদিবাসী শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের উত্তর বাঁকাকুড়া গ্রামে তার শ্বশুর হালেন্দ্র সাংমার ৬ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ আনারস চাষ শুরু করে। প্রথম অবস্থায় একটু চিন্তায় পড়লেও পরবর্তিতে ফলন দেখে আশায় বুকে বাঁধেন পিটার। এ আনারস যখন পাকা শুরু হয় তখন দেখেন মধুপুরের চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু ও রসালো হয়েছে। পুরো বাগানের প্রায় সোয়া লাখ পিস আনারস ১৬ লাখ টাকায় বিক্রিও করে দিয়েছেন তিনি। ফলে আশাপাশের অনেকেই এ বাগান দেখতে এবং চাষাবাদের আগ্রহ নিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন তার বাগানে।
সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের ডালুতে এক সময়ের পতিত জমিতে সারি সারি আনারস বাগানে থরে থরে পেকে আছে মধুপুরের জানের আনারস। রসে ট্ইুটুম্বর এ আনারস। গারো পাহাড়ের মাটি অনেক আগে থেকেই খুবই উৎপাদনশীল মাটি। এ পাহাড়ি মাটিতে যা কিছুই রোপণ করা হয় তাই হয়। সর্বশেষ মধুপুরের জাতের আনারস রোপন করে সফল হয়েছেন মধুপুরের পিটার সাংমা নামে এক আনারস চাষি। প্রথমে তিনি মুধুপুর থেকে এসে তার শ্বশুরের ৬ একর জমিতে গত বছরের শুরুতে প্রায় সোয়া লাখ চারা রোপণ করেন। বিগত প্রায় দের বছরে ওইসব চারা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার গাছে আনারস ফলন হয়। পুরো বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ, সেচ, সার, পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় প্রায় ১১ লাখ টাকা। তার এ পুরো বাগান মধুপুরের এক ব্যবসায়ীর কাছে ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে বন্য হাতি তার বাগানের কিছু ক্ষতি করায় লাভের পরিমাণ কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান পিটার। তবে হাতির কারণে প্রায় ২০ হাজার টাকার আনারস ক্ষতি হয়েছে বলে পিটার জানান।
প্রথম অবস্থায় স্থানীয়রা পিটারের বাগান দেখে সন্দিহান ছিলেন। পরবর্তিতে ফলন ভালো দেখে গ্রামের মানুষ আশার আলো দেখেন এবং অনেকেই তা দেখে আগ্রহ প্রকাশ করছে তারাও পাহাড়ি পতিত জমিতে এ আনারস চাষ করবে। এছাড়া দূর দূরান্তের অনেকেই এ বাগানের কথা শুনে বাগান দেখতেই আসছে এবং আনারস খেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া এ বাগানে পরিচর্যার কাজ করে অনেকেই আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক। মধুপুর থেকে আসা এ পাইকার এসে ১৬ লাখ টাকায় পুরো বাগান কিনে নিয়ে তিনিও এ আনারসের বেশ প্রশংসা করেন।
ঝিনাইগাতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, পাহাড়ি মাটি মূলত এসিডিক। আর এ মাটিতে আনারস চাষের খুবই উপযোগী। উচ্ছমূল্যের এ ফল চাষ করে পাহাড়ের অনাবদি জমি যেমন চাষের আওতায় আসবে তেমনি পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষিতে নতুন অর্থকরি ফসল হিসেবেই আনারসের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি জানায়।
এদিকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা এবং হাতির আক্রমণ ঠেকাতে পারলে মুধুপুরের পর এ গারো পাহাড়ের জমিতে এ আনারস চাষ করে স্থানীয়দের ভাগ্যবদলের পাশাপাশি দেশের লাভজনক অর্থকরি ফলে রূপান্তর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসী।