চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজার
পাইকারি ও খুচরায় দামের বিস্তর ফারাক
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তে ট্রাকে ট্রাকে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ। এতে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে পাইকারিতে। তবে খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। তারা এখনো প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা করে বিক্রি করছেন। পাইকারিতে যেখানে প্রতি কেজি ৫০ টাকায় ঠেকেছে সেখানে খুচরায় দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্তত ৪০ টাকা পার্থক্য প্রতি কেজিতে। তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাড়তি দাম নেয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই সহসা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসবে দাম। গত সোমবার থেকে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে শুরু করে। মঙ্গলবার ও বুধবার প্রচুর ট্রাক প্রবেশ করেছে সেখানে। সব ট্রাকই পেঁয়াজবাহী। আড়তদাররা বলেছেন, খাতুনগঞ্জের বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমদানিকারকের খরচ পড়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। কারণ, হিলি স্থলবন্দরে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়।
চট্টগ্রাম আসতে আরো পাঁচ টাকা মতো খরচ হয়। অন্যদিকে খাতুনগঞ্জে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে। প্রতি কেজি এখন ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে আড়তে। দুই দিন আগে সেই পেঁয়াজ প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়েছে। এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দরপতন হলেও খুচরা বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকার কমে পেঁয়াজ মিলছে না। ভোক্তারা বলেছেন, পাইকারিতে যখন পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় তখন খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করেন।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি -২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়ে কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ
উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি ৪ লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত ৪ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে। আড়তদাররা জানান, সীমান্ত থেকে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করছে দেশে। সেই ট্রাক আসছে খাতুনগঞ্জের আড়তে। আমরা শুনেছি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ ৩০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কেমন হবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। এটি আসলে নির্ভর করবে চাহিদা ও যোগানের ওপর। ৮০/৯০ টাকার দেশি পেঁয়াজ এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরো কমবে। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ মাত্র আসা শুরু করায় দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এভাবে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করলে দামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর এক কর্মকর্তা জানান, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির কথা। এখন সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আমদানির ঘোষণার পর কমতে শুরু করেছে দাম। ভারতীয় পেঁয়াজের বুকিং দর বাড়েনি। তাই ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে পারে সেজন্য প্রশাসনকে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। গতকাল নগরীর বহদ্দারহাট এবং চান্দগাঁও এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো বড় সাইজের পেঁয়াজ ৯০ টাকা এবং ছোট সাইজের পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। কারণ হিসাবে তারা জানালেন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও খুচরা পর্যায়ে তা সরবরাহ আসতে সময় লাগবে। কেবল খুচরা পর্যায়ে সরবরাহ বাড়লেই প্রতি কেজিতে দাম কমবে। চান্দগাঁও এলাকার বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক ইদরিস সওদাগর বলেন, ভারতীয় আমদানি পেঁয়াজের দাম কম তা আমরা জানি। কিন্তু আমরাতো বেশি দামে পেঁয়াজ ক্রয় করেছি। এই মুহূর্তে আমরা আমদানি দাম হিসাব করে বিক্রি করলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব। আমরা কেবল কেনা পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হলেই আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ কিনব। আর তখনই দাম কম নিতে পারব ক্রেতাদের কাছ থেকে। অন্যথায় বাড়তি দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে।