অন্যরকম
প্রশান্ত মহাসাগরে গভীরে ইটের রাস্তা
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহের যেন শেষ নেই। বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা প্রতি নিয়তই নানা তথ্য জানি, আবার এমন অনেক তথ্য অজানাও আছে। যেমন- সাগরের পানি আদৌ নীল নয় কিংবা মহাসাগরের তলেও আছে ঝরনা, হৃদ, নদী, আগ্নেগিরি, গভীর খাদ, সোনাসহ আরো অনেক কিছু। এবার জেনে নেয়া যাক মহাসাগরের গভীরে লুকিয়ে থাকা আরো এক রহস্য সম্পর্কে- চারপাশে ঘন নীল জলের হাতছানি। আর এই জলের অতল গভীরে আচমকাই দেখা মিলল অদ্ভুত এক রাস্তার! দেখে হলুদ রঙের ইট দিয়ে বাঁধানো রাস্তা বলে ঠাহর হয়! আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে যে, কোনো এক সময় হাঁটা-চলার জন্যই ব্যবহার করা হত ওই রাস্তা। কিন্তু সত্যিই কি তা-ই? ফলে সমুদ্রের গভীরে ওই রাস্তাই রহস্য এখন ছড়িয়ে দিয়েছে সমুদ্রবিজ্ঞানীদের মনে। সূত্রের খবর, প্রশান্ত মহাসাগরের একেবারে তলদেশে ওই ইটে বাঁধানো রাস্তার সন্ধান পেয়েছেন এক্সপ্লোরেশন ভেসেল নটিলাসের গবেষকরা। সম্প্রতি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশান্ত মহাসাগরের পাপাহানাওমোক্যুয়াকিয়া মেরিন ন্যাশনাল মনুমেন্টের লিলিউওকানি রিজ অঞ্চলের ওপর গবেষণা চালাতে শুরু করেন। সেই সময় হঠাৎ করেই সেখানে অদ্ভুত ধরনের গঠন লক্ষ্য করে ওই গবেষক দলটি।
পাথুরে ওই এলাকায় কবলস্টোন বা খোয়া-পাথরের তৈরি রাস্তার সৃদশ একটি পথ নজরে আসে। আর তা দেখেই এক গবেষক মজা করে বলে ওঠেন, ‘এই ইটের রাস্তা দিয়েই বোধহয় আটলান্টিসে পৌঁছে যাওয়া যাবে’। আবার আর এক গবেষককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘অদ্ভুত’। সমুদ্রবিজ্ঞানীদের ওই দলটি জানিয়েছে যে, সমুদ্রের গভীরে অগ্ন্যুৎপাতের জেরে গজিয়ে ওঠা পর্বত সদৃশ গঠন বা সি-মাউন্টের ওপর গবেষণা চালানো হচ্ছিল। আসলে মধ্য ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমন বহু পর্বত সদৃশ গঠনের উৎপত্তি কীভাবে, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। সেই গবেষণা চলাকালীন আচমকাই আয়তাকার ইট দিয়ে তৈরি রাস্তার দেখা মেলে। প্রাথমিকভাবে যেটাকে দেখে মানুষের তৈরি বলেই ভ্রম হয়! কিন্তু আদৌ এই ধারণা কি সঠিক? এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ, বিষয়টা আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে, সেটা নয়। আসলে এই পাথুরে রাস্তা সদৃশ গঠনটিকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি সংক্রান্ত ভৌগোলিক উদাহরণ হিসেবেই ধরা যেতে পারে। গবেষণার এই ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে এবং তার ক্যাপশনে বলা হয়েছে যে, নুটকা সি-মাউন্টের শিখরে গবেষক দলটি একটি শুষ্ক হ্রদের তলদেশের হদিশ পেয়েছে। তাতে লাভা উদগীরণের ফলে তৈরি হওয়া হায়ালোক্ল্যাস্টিট পাথর চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকী, পাথরের ভাঙা টুকরোও সমুদ্রের তলদেশে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই রাস্তার পাথরের খোয়া-পাথরের মতো এমন অদ্ভুত গঠন কী কারণে? এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, আসলে অগ্ন্যুৎপাতে লাভা উদগীরণের সময় ক্রমাগত গরম আর ঠান্ডা হওয়ার কারণে বহু সময় ধরে ওই পাথরগুলো খোয়া-পাথরের আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন, ওই এলাকা নিয়ে তারা আগে কখনওই গবেষণা করেননি। এবার তাই সেখানকার প্রাচীন সিমাউন্টের পাথুরে বিন্যাস নিয়ে আরো ভালোভাবে গবেষণা চালাবেন তারা।