কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে একের পর এক বিতর্কিত, শিষ্টাচার ও উগ্র বক্তব্য যেন কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তা ‘নিজের বাবাকে কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু’ দাবি করলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য সচিবের পদ থেকে বহিষ্কৃত কায়সারুল হক জুয়েল। কক্সবাজারের এক সভায় গত ৫ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবউল আলম হানিফ এমপির একটি বক্তব্যের উত্তরে জুয়েল এমন দাবিটি করেন।
কক্সবাজারের সভায় মো. মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলে ছিলেন, পিতার পরিচয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির করার সময় শেষ। পিতা ত্যাগী এবং দলের পরীক্ষিত নেতা হতে পারেন। তাই বলে তার সন্তানরা সুযোগ-সুবিধা পাবে এটা শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। শেখ হাসিনার কাছে পিতা যেমন পরীক্ষিত নেতা ছিলেন তার সন্তানরাও যেন পরীক্ষিত হন এটা মূল্যায়ন করেন। এই বক্তব্যের উত্তর গত ৭ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা দেন কায়সারুল হক জুয়েল। যে ভিডিওটিতে জুয়েল বলেন, আমার বাবা মরহুম একেএম মোজাম্মেল হক কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর পরিচয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী পরিচিত হতে পারলে আমরা কেন বাবার পরিচয়ে রাজনীতি করব না। আমরা পদ পদবি চাই না। আর এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে নিন্দা জানিয়েছে বিবৃতি প্রদান করেছেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কায়সারুল হক জুয়েলের দেয়া বক্তব্য শুধু শিষ্টাচার বর্জিতই নয়, তা চরম ধৃষ্টতা ও অমার্জনীয় অপরাধ ও বটে। প্রয়াত জননেতা একেএম মোজাম্মেল হকের আওয়ামী লীগের জন্য শ্রম ও ত্যাগের বিষয়টি স্মরণ যোগ্য বটে, কিন্তু তাকে জাতির পিতার সঙ্গে তুলনা করাটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জুয়েল তার বক্তব্যে তার পিতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সব মানুষের আবেগকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অন্তঃসারশূন্য, হিতাহিত জ্ঞানহীন বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদের মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ২ জন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মরহুম একেএম মোজাম্মেল হকের ছেলে মাসেদুল হক রাশেদ। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদ। তিনি বিদ্রোহীপ্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কার হয়েছেন। রাশেদের ছোট্ট ভাই কক্সবাজার সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনয়নে নির্বাচিত চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল। তিনি সর্বশেষ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিবের পদ থেকে বহিষ্কার হন। তাদের বোন জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী তাহমিনা চৌধুরী লুনা। তিনি পদত্যাগ করেছেন। এক ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল। জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি থেকে বহিষ্কার হন। মেঝ ভাই শাহিদুল ইসলাম সোহেল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এই নির্বাচনের শুরুতে কক্সবাজারের স্থানীয়-বহিরাগত ইসু, মরহুম বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য, স্বেচ্ছায় নৌকার পক্ষে এক চেয়ারম্যানের ভোট ডাকাতির স্বীকারোক্তি, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করে বক্তব্য প্রদান চলে আসছে।