আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব
দৌলতপুরে ভূ-গর্ভস্থ পানি উঠছে না অনেক নলকূপে
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৪০ ভাগ অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উঠানো যাচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমে তীব্র দাবদাহের কারণে পানির স্তর কিছুটা নেমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন নলকূপ দিয়ে উত্তোলিত ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলের উপর নির্ভরশীল গ্রামের প্রায় শতভাগ মানুষ। তবে যাদের গভীর নলকূপ রয়েছে তাদের নলকূপে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে ভূগর্ভস্থ পানি সংকটের পাশাপাশি অনেক এলাকায় আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিকল্প না থাকায় আর্সেনিকযুক্ত পানিই পান করতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। সংশ্লিষ্টদের ধারনা, শুকনো মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় আর্সেনিকের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এখানকার প্রায় শতভাগ মানুষই ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারনা করা হচ্ছে দৌলতপুর উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার টিউবয়েল বা অগভীর এবং প্রায় সাড়ে ৬ হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলিত পানি ব্যবহার করে পানসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হয়।
চাষাবাদের জন্যও ভূ-গর্ভস্থ পানিই এখানকার কৃষকদের একমাত্র ভরসা। গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে নলকূপ দিয়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা পানি কম পাওয়া গেলেও তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু এ বছর ভূ-গর্ভস্থ পানির বেশ সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষের নলকূপ দিয়ে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক চাপাচাপির পর এসব নলকূপ দিয়ে স্বভাবিকের তুলনায় ১০ ভাগও পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সামান্য পানি দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটছে না। সাধারণ মটর (সাব মার্সেবল ছাড়া) দিয়ে যারা পানি উত্তোলন করে থাকেন তাদের অবস্থা আরো করুণ। টিউবয়েল দিয়ে সামান্য কিছু পানি উঠানো গেলেও প্রায় ৯০ ভাগ সাধারণ মটর দিয়ে পানি উত্তোলন করতে পারছেন না। তাছাড়া শতকরা ৫-৮ ভাগ নলকূপ একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে পানির অভাবে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভুগিরা। এদিকে উপজেলার মথুরাপুর, প্রাগপুর, আদাবাড়িয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে নলকূপে পানি সংকটের পাশপাশি আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পানি সংকটের কারণে গ্রামের মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানিই পান করছেন। এতে করে মানুষের আর্সেনিক সংক্রমিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের শালিমপুর গ্রামের আল আমিন রিন্টু বলেন, টিউবয়েলের সঙ্গে মটর লাগিয়ে তিনি পানি উত্তোলন করেন। পাইপে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। মটর চালুর পর দুই এক মিনিট পানি ওঠার পর আর পানি উঠে না। ১০/১৫ মিনিট চেষ্টার পর সামান্য কিছু পানি উঠে। একই ইউনিয়নের বাগোয়ান গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, তাদের গ্রামের বেশ কয়েকটি টিউবয়েলের পানিতে আর্সেনিক ধরা
পড়েছে। পানিতে আর্সেনিকের নানা লক্ষণ থাকার পরও গ্রামের মানুষ সচেতন না হওয়ায় ওই পানিই পান করছেন। আদাবাড়িয়া গ্রামের
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তার টিউবয়েলটি একেবারে অকেজো হয়ে গেছে। টিউবয়েলের পাইপে কোনো পানি থাকে না। অনেক চেষ্টা করেও কোনো পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না। খাস মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার কবির মিন্টু বলেন, গ্রামের অধিকাংশ টিউবয়েল দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না। পানি সংকটের পাশাপাশি তার ইউনিয়নে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তুলে ধরা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মানুষের বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খাদিমুল ইসলাম বলেন, শুস্ক মৌসুমে পানির স্তর কিছুটা নিচে চলে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বর্ষা শুরু হলে নলকূপগুলো ফের স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আর্সেনিকের বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, পানি পরীক্ষার মাধ্যমে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলোতে চিহ্নিত করে সেগুলো ব্যবহার না করতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।