ঢাকা ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ কক্সবাজার পৌর নির্বাচন

মেয়র পদে জয়-পরাজয় নির্ভর করছে বিএনপি-জামায়াতের ভোটের ওপর

মেয়র পদে জয়-পরাজয় নির্ভর করছে বিএনপি-জামায়াতের ভোটের ওপর

নানা আলোচনা-সমালোচনার সময় পেরিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পৌরসভার ভোটগ্রহণ। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মধ্যে শেষ হয়েছে সব প্রস্তুতি। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই পৌরসভার ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে ভোট।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন অংশ নিলেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এবং দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী। সবাই বলেছেন, শেষ হাসি কি নৌকার হচ্ছে? নাকি আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে বিজয় আনছেন বিদ্রোহী? তবে অধিকাংশ ভোটার, সচেতন মহল মেয়র পদে নৌকা বিজয়ের সম্ভাবনার কথা বলছেন। যার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ রাজনীতির নানা সমীকরণ, ৩ সপ্তাহের ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা আর নৌকার পক্ষের পরিকল্পনার কলা-কৌশল আছে বলে যেমন বলা হচ্ছে। ঠিক তেমনি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধিন সরকারের কক্সবাজার কেন্দ্রিক উন্নয়নের মহাযজ্ঞের প্রতি সাধারণ ভোটারদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলনে নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনায় আশার সঞ্চার করেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। আবার অনেক ভোটার এখনও বিশ্বাস করছেন সবকিছু পেরিয়ে বিদ্রোহীও হাসতে পারেন শেষ হাসি। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকা ৫ প্রার্থী হলেন, আওয়ামীলীলীগের মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী নারকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মাসেদুল হক রাশেদ, তাঁর স্ত্রী মোবাইল প্রতীকের জোসনা হক, হেলমেট প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জগদীশ বড়ুয়া ও বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মো. জাহেদুর রহমান। তবে মুল লড়াইয়ের প্রার্থী আওয়ামীলীগ ও বিদ্রোহীর মধ্যে। কক্সবাজার পৌরসভার ১২ ওয়ার্ড ঘীরে সাধারণ ভোটারদের দেয়া তথ্য, একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালিত জরিপ আর সার্বিক পরিস্থিতি বলছে এই পৌরসভার নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের মেয়র বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন ঘীরে জাতীয় টেলিভিশন ও প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকার ২০ জন কক্সবাজার প্রতিনিধিকে সাথে নিয়ে এক জরিপ পরিচালনা করেছেন কক্সবাজার পিপলস্ ফোরাম। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, ২০ জন ১২ টি ওয়ার্ডের ৫ জন করে সাধারণ ভোটারদের সাথে পৃথকভাবে কথা বলেছেন। এই ২০ জনের মিলে ১২ শত ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ‘ওই ওয়ার্ডে কোন প্রার্থীর ভোটে এগিয়ে থাকবেন এবং কেন?’ যে জরিপের ফলাফলে ৮৫ শতাংশ ১২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭ ওর্য়াডে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের কথা বলেছেন আর ২ টি ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী নারকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী এগিয়ে থাকার কথা বলেছেন। অপর ৩ টি ওয়ার্ডে ভোটের ক্ষেত্রে হাড্ডাহাড্ডি হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। যার কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নির্বাচনের শুরুতে জেলার শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য, নানা জনকে হুমকি, ক্ষমতার একক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, আলোচিত-সমালোচিত মন্তব্য, আওয়ামীলীগ রাজনীতির নানা সমীকরণের পাশাপাশি কক্সবাজার কেন্দ্রিক আওয়ামীলীগের উন্নয়নের ভোটারদের আস্থার ফলে নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনায় আশার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিজয় আরও সহজতর হয়েছে। আবার ১৫ শতাংশ বলেছেন, সমীকরণ উল্টে বিদ্রোহী প্রার্থীও বিজয় হতে পারে। তাদের পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য, আওয়ামী বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের ভোট মিলেই শেষ হাসি বিদ্রোহীও হাসতে পারেন। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আজ সন্ধ্যার পর পর্যন্ত।

কেন্দ্রে যাচ্ছে সরঞ্জাম, প্রস্তুত প্রশাসন : কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রেহণের জন্য রবিবার দুপুরে পৌরসভার ৪৩ টি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পুলিশ, আনসার ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা গেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১২টি ওয়ার্ডে ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ দায়িত্বে থাকবে ১৫ ম্যাজিস্ট্রেট, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১২টি র‌্যাব টিম ও এক হাজারের বেশি পুলিশ।

৪৩টি কেন্দ্রে ২৪৫টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, ‘অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করে আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠিয়েছি। যেহেতু ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলবে তাই প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের বলা আছে নির্বাচন শেষ হলে কেন্দ্রেই যেন ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিগত দিনেও কক্সবাজারে ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে এবারও একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবো বলে মনে করি।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের নিদের্শনা মতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন শতভাগ নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচন সুষ্টু করতে জেলা প্রশাসনের যা যা করার প্রয়োজন সব করবে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশের যারা করা প্রয়োজন তার সবই করছে এবং করবে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া সকল নিদের্শনা যথাযথভাবে পালন করছে পুলিশ।

পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৯৪ হাজার ৮০২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। যেখানে মোট ৭৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়া ৪ টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ১৬ জন এবং ১২ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত