কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বের উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতিকে প্রভাবিত করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
তাই কালক্ষেপণ না করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের সাথে সমন্বয় করে আমাদের উচ্চশিক্ষা পাঠ্যক্রমেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে দেশের শিক্ষাবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্সের সম্ভাবনা ও শঙ্কা’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। ইউজিসির ইনোভেশন উইং গতকাল কমিশনের অডিটরিয়ামে এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান ও কমিশনের জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী করা না গেলে আমরা এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ব। আমাদের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানোর কাজটি দ্রুত শুরু করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমাদের চিন্তা করতে হবে উচ্চশিক্ষায় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া কোথায় পৌঁছেছে। আমরা কেন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি, সে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্সের যুগে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আরো মনোনিবেশ করতে হবে, তা না হলে আমরা সত্যিই বিপজ্জনকভাবে পিছিয়ে যাব।
ড. ফেরদৌস জামান বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ইন্টারনেট অব থিংস (আওটি), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এর প্রভাবে উন্নত বিশ্বে দক্ষ জনবলের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের জন্য যেন বোঝা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ইউজিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও ইনোভেশন ফোকাল পয়েন্ট রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. সেঁজুতি রহমান। কর্মশালায় ইউজিসির ৬০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল স্বাক্ষর বাস্তবায়নের আহ্বান ইউজিসির : ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য ডিজিটাল স্বাক্ষরের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন।
ডিজিটাল স্বাক্ষর রেজিস্ট্রেশনবিষয়ক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ) গতকাল ইউজিসির অডিটরিয়ামে এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করে।
সিসিএ কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান, আইএমসিটি বিভাগের পরিচালক ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়া ও সিসিএ কার্যালয়ের উপ-নিয়ন্ত্রক মো. মোখতার আহমেদ। প্রশিক্ষণে ইউজিসির পরিচালকসহ প্রথম শ্রেণির ১০৮ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
ডিজিটাল স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ স্মার্ট গভর্নমেন্ট। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ডিজিটাল স্বাক্ষর। নিরাপদে তথ্যে আদান প্রদান নিশ্চিত করতে হলে ডিজিটাল স্বাক্ষর প্রয়োজন। এটি ইলেকট্রনিক রেকর্ডের আইনানুগ স্বীকৃতি দিবে, ই-মেইল যোগাযোগ নিরাপদ, জালিয়াতি রোধ ও দুর্নীতি দমন করবে। ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে সাইবার হামলা, ই-লেনদেন ইত্যাদি ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল স্বাক্ষর নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল স্বাক্ষর নিশ্চিত করা গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে, দ্রুততার সাথে দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করা যাবে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল স্বাক্ষর নিশ্চিত করা গেলে একজন শিক্ষক, শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে এবং সরকারের পেপারলেস অফিস বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তথ্যের বিকৃতি রোধ করা যাবে এবং তথ্যে অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাবে।