চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিত্যক্ত সরকারি একটি আমবাগানকে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে পর্যটকদের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দার খুলেছে। এই জাদুঘরের দাম দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম। সেখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে গাছ থেকে আম পেড়ে খাওয়া, বিশ্রাম, দেশি-বিদেশি গাছের চারা কেনার সুযোগ। বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামটি শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের পারকানসাট এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ২ বছর আগে এ জেলার সুস্বাদু আম রক্ষা ও জনপ্রিয় করতেই গড়ে তোলা হয়েছে আমের জাদুঘর। এটিকে ঘিরে ম্যাংগো ট্যুরিজমের নান্দনিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে প্রশাসন। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতির পিতার ম্যুরালসহ জাদুঘরটির দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণ, পুকুর খনন, ৫৫ প্রজাতির আমের নামকরণসহ ম্যাংগোপিডিয়া প্রকাশ, আধুনিক জার্মপ্লাজমের চারা রোপণ, টপ ওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে পুরোনো গাছকে আধুনিক গাছে রূপান্তর, নার্সারি নির্মাণ, পর্যটকদের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১০০ বিঘার বাগানটি বেদখল ছিল। একসময় বাগানটিতে অনেক জাতের আম উৎপাদন হলেও দিন দিন এর অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয়রা ইচ্ছেমতো বাগানের গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে যেত। মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানাও ছিল বাগানটি। বেদখলে যাওয়া বাগানটি উদ্ধার করে এখন সেখানে গড়ে উঠেছে জাদুঘর। নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম’। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাগানটির সীমানাপ্রাচীর ও অবকাঠামো উন্নয়নের বেশ কিছু নান্দনিক কাজ শেষ হয়েছে।
বাগান সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আম চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু জাতের আমের বাগান। সেসব আমের স্বাদ ও গন্ধে একটির থেকে আলাদা অন্যটি। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এ জাতগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন। তাই আগামীতে সংরক্ষণ ও উন্নয়নসহ আমশিল্পের বিকাশে জাতগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। এ লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে আমের বৃহৎ জার্মপ্লাজম সেন্টার বা বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম। মিউজিয়ামটির দায়িত্বে থাকা আব্দুস সামাদ জানান, বাগানের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে আরসিসি রাস্তা, আমজাত পণ্যের প্রদর্শনী কেন্দ্রও। প্রতি একরে ১৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যে আলট্রাহাইডেন সিটি পদ্ধতিতে আম চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আমের জাত সংগ্রহ ও জার্মপ্লাজম তৈরি হচ্ছে, যেখান থেকে আমচাষিরা উন্নত জাতের স্যাপলিং সংগ্রহ করে আম ব্যবসায় সম্প্রসারণ ঘটাতে পারবেন। এ মিউজিয়ামে পাওয়া যাবে জিআই সনদপ্রাপ্ত ক্ষীরসাপাত আমের স্যাপলিং। এছাড়া বাইরে থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও চারা কিনে নিতে পারবেন।
আব্দুস সামাদ আরো জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্যাংগো ট্যুরিজমের দুয়ার খুলেছে এই জাদুঘরের মাধ্যমে। আম মৌসুম শুরু পর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন নানান শ্রেণি পেশার মানুষ। বাগান ঘুরে দেখে তারা মুগ্ধ। তিনি আরো বলেন, একজন পর্যটক জাদুঘরে ঢোকার পরেই বিভিন্নজাতের আম দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এরপরে আমের সাথে পরিচিতি ও গাছের চারা দেখানো হয়। এখানে রয়েছে গাছ থেকে কাঁচা ও পাকা আম পেড়ে খাওয়ার সুযোগ। শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জাদুঘর থেকে আমসংক্রান্ত্র নানা তথ্য জেনে অনেক নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে। জেলার অর্থনীতিতে তারা বড় ভূমিকা রাখবেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামে বর্তমানে ৫৫ প্রজাতির আমের জাত সংরক্ষণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান বলেন, জেলার আমের ঐতিহ্যকে দেশে-বিদেশে পরিচিত করা, আমকেন্দ্রিক পর্যটনের বিকাশ এবং সুস্বাদু আম রক্ষা ও জনপ্রিয় করতেই এ জাদুঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। জাদুঘরটি ঘিরে ম্যাংগো ট্যুরিজমের মহাপরিকল্পনা রয়েছে
যেভাবে আসবেন আমরাজ্যে : ঢাকা থেকে বেশ কিছু নামিদামি বিলাসবহুল কোচে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, অথবা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজশাহী। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসা যাবে। এখানে রাত্রিযাপনের জন্য রয়েছে বেশ কয়েটি উন্নত মানের আবাসিক হোটেল। সোনামসজিদ এলাকায় রয়েছে একটি বিলাস বহুল পর্যটন মোটেল। সেখানে যে কেউ থাকতে পারবেন। দিনের বেলা ঘুরে ফিরে বাগান দেখার জন্য পাওয়া যাবে ছোট ছোট ব্যাটারি চালিত অটো রিকসা। এছাড়া একটু বিলাসিতা করতে চাইলে অল্প ভাড়ায় মিলবে এসি ননএসি মাইক্রোবাস ও কার।