ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গবাদি পশুর শরীরে দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি গরু এরইমধ্যে মারা গেছে। ফলে গরুর খামারিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। এরই মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গরু মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কোরবানির ঈদের আগে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। অভিযোগ রয়েছে রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজনদের। ফলে গ্রামের কিছু হাতুরে ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এতে গরু সুস্থ না হয়ে উল্টো আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে সারা উপজেলায় এক হাজারেরও বেশি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে ৬৭৮টি গরু আক্রান্ত এবং ৮টি গরুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করা করেছে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। কিন্তু বাস্তবে অনেক বেশি গরুর মৃত্যু হয়েছে। অনেক খামারি ও গৃহস্থ ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরু বিক্রি করছেন কম দামে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতিতে টাকা পয়সা হাতে না থাকায় আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশুর মালিকদের। উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের ঘাগড়া পাড়া গ্রামের গরুর খামারি এনায়েতুল্লা ফকির জানান, তাদের খামারের একটি বড় গরুর পা ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। বড় গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ। শরীর পচে গর্ত হয়ে গেছে। সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ করেও গরু সুস্থ হয়নি। গত সোমবার দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দেখা হয় এনায়েতুল্লার ভাই বায়তুল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না। খবর দিলে বাড়িতে যায় না ডাক্তার। এ অবস্থায় আমরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি গরু মারা গেছে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে। একই গ্রামের গৃহস্থ আব্দুল বারেকের ছেলে সোহেল মিয়া বলেন, তার তিনটি গরুসহ এলাকার অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত। এছাড়া এই গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ভাইরাসটি হানা দিচ্ছে। শুধু জাটিয়াতেই নয়, অন্য ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নেও দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন। গরু খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। খামারিরা জানান, কোনো বাড়ি বাদ নেই। সবার গরুর অসুখ হয়েছে। উপসর্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রথমে গরুর জ্বর হয়, এর পর গায়ে গুটি গুটি হয়ে ফুলে যায়। ঘা হয়ে পেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়। কাঁপুনিও থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দিতে হয় বলে অনেকেই গরু পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন জানান, ‘লাম্পি স্কিন’ রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে আক্রান্ত পশুকে পেনিসিলিন, এন্টি হিস্টামিন এবং জ্বর হলে প্যারাসিটামল দিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম মুঠোফোনে জানান, এই রোগের ফলে গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোঁড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু সুস্থ হতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে। তিনি আরো বলেন, অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।