ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

টাঙ্গাইলে জৈব সার উৎপাদনে সফল নারী হালিমা

টাঙ্গাইলে জৈব সার উৎপাদনে সফল নারী হালিমা

টাঙ্গাইল জেলার রাবনা নয়াপাড়ার হালিমা বেগম অভাব অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন করে সফল হয়েছেন। বাড়ির ভিটিতে টিনের ঘর তুলে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন করে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। অর্জিত আয় থেকে তিনি সংসারের যাবতীয় খরচ মেটানোর পর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছেন। জানা গেছে, কৃষকের মেয়ে হালিমা বেগমের বাল্যবিয়ে হয়। গ্রামের স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০০৩ সালে হালিমা বেগমের রাবনা নয়াপাড়ার মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। স্বামীর তেমন আয়-রোজগার না থাকায় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। মেয়ে দুটিকেও স্কুলে দিতে পারেননি। এমতাবস্থায় তিনি গরু লালন-পালন করে দুধ বিক্রির মাধ্যমে মেয়ে দুটিকে স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে ভর্তি করে দেন। শুরুতে বাড়ির টিনের ঘরে তিনটি গরু দিয়ে ফার্ম তৈরি করে দুধ বিক্রি করে সংসারের খরচের পাশাপাশি মেয়ে দুটিকে লেখাপড়া করাতে খাকেন। পরে গৃহপালিত গরুর গোবরকে কাজে লাগিয়ে জাপানি কেঁচো কিনে কয়েকটি ছোট টিনের ঘর তুলে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন শুরু করেন। গত ২০০৮ সালে কেঁচো সার উৎপাদনের যাত্রা শুরু করলেও প্রথম দিকে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। মূলত প্রচারের আলোয় না থাকা ও চাহিদা কম থাকায় উৎপাদিত কেঁচো সার বা জৈব সার বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছিল। যে কারণে দুই বছর পর কেঁেচা সার বা জৈব সার উৎপাদন বন্ধ করে গরু লালন-পালন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তবে বিগত ২০১৫ সাল থেকে আবারো কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন শুরু করেন। এবার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন করে বিক্রি করেন। সাড়াও পান আশানুরূপ। তার তৈরি কেঁচো সার বা জৈব সারের সুনাম আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। জেলা-উপজেলা ছাড়াও বিভাগীয় শহরের বড় বড় দোকানে টনে টনে জৈব সার সরবরাহ করেন তিনি। কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন ও বিক্রি করে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। শুরুর দিকে জৈব সারের খামারে একা কাজ করলেও এখন তার স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেন, ছোট ভাই ও দুইজন মহিলা শ্রমিক নিয়ে সারা দিন কাজ করেন। তার উৎপাদিত কেঁচো সার বা জৈব সারের নাম দিয়েছেন ‘এমএম ভার্মি কম্পোস্ট’। বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকতারা ছাড়াও বিদেশি পর্যটকরা তার তৈরি জৈব সারের খামার দেখতে আসেন এবং পরামর্শ দিয়ে যান। বর্তমানে হালিমা বেগম নিজে কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন করছেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করছেন। গৃহিণী, দুস্থ, বিধবা মহিলাদের কেঁেচা সার উৎপাদনে উৎসাহিত করে ‘নারী স্বপ্ন উন্নয়ন সংগঠন’ নামে একটি সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেছেন। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৫২ জন। এর সভাপতি হালিমা বেগম এবং সাধারণ সম্পাদক সাথী আক্তার। প্রতি বৃহস্পতিবার তারা একত্র হয়ে উন্নয়নমূলক আলোচনা সভা করে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। হালিমা বেগম কেঁেচা সার বা জৈব সারের সফল উৎপাদকের পাশাপাশি সফল কৃষিকর্মীও। তার তৈরি জৈব সার দিয়ে বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করেছেন। তার এ কৃষিতে করলা, ডাটা, পাটশাক, ঢ্যাঁড়স, লাউ, কুমরা, আলু ছাড়াও বিভিন্ন জাতের আম, কাঁঠাল ও ফুল-ফল রয়েছে। সফল উদ্যোক্তা হালিমা বেগম জানান, তিনি গৃহপালিত গরু লালন-পালন করে গোবরকে কাজে লাগানোর জন্য আগে দেখে আসা কেঁেচা সার উৎপাদনে এগিয়ে আসেন। তার তৈরি জৈব সার রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। ড্রাগন চাষি ও সবজি চাষিরা এ সার ব্যবহার করে থাকেন। শহরের উঁচু ভবনের ছাদে ফল ও ফুলের চাষে জৈব সার ব্যবহার হয়। তিনি শুরুতে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে প্রচুর বিক্রি করতেন। পরে পাইকারি বিক্রি শুরু করেন। তার তৈরি জৈব সার প্রতি কেজির খুচরা দাম ২৫ টাকা এবং পাইকারি প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন উপ-সহকারী পরিচালক লতিফা আক্তার জানান, হালিমা বেগম পরিশ্রম ও দক্ষতার গুণেই সফল উদ্যোক্তা হতে পেরেছেন। তিনি তার প্রকল্পে একাধিকবার গিয়েছেন। কেঁচো সার বা জৈব সার প্রয়োগে যে কোনো ফসলের ফলন ভালো হয়। ফসলে রোগবালাই কম হয়। মাটির গুণাগুণ বেড়ে যায়। কৃষি অফিস থেকে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত