ক্ষেতলালে বসেছে ৫শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির মেলা
হাজারো মানুষের আগমনে বইছে আনন্দের জোয়ার
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শাহিনুর ইসলাম শাহিন, ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) থেকে
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির মেলা বসেছে। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার দিনটি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সন্ন্যাসতলী মেলাকে কেন্দ্র করে। দিনব্যাপী এই মেলা আয়োজন করা হলেও মেলা চলবে আজ পর্যন্ত। এ মেলাকে ঘিরে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষ মেতে ওঠে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্ন্যাস ঠাকুরের পূজা উপলক্ষ্যে ক্ষেতলাল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর-জিয়াপুর গ্রামের তুলসীগঙ্গা নদীর কোলঘেঁষে বসে ৫ শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই সন্ন্যাসতলীর মেলা। আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে নানা বয়সের মানুষ মেতে উঠে হরেক রকম ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবে। কার ঘুড়ি কত উঁচুতে উঠে আর কে কার ঘুড়ির সূতা কেটে দিতে পারে, দিন ভর চলে এমন প্রতিযোগিতা। গ্রামীণ এ মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামের বাড়ি বাড়ি মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনের আগমন ঘটে। এ মেলার মূল আকর্ষণ নানা রকমের ঘুড়িসহ বাঁশের তৈরি মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ। আর এসব ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফলমূল, হরেক রকমের মিষ্টি, বাঁশের তৈরি সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র এবং কাঠের আসবাবপত্র পাওয়া যায় এ মেলায়। সঙ্গে আছে বিভিন্ন প্রসাধনীসামগ্রীর দোকান। মেলার দ্বিতীয় দিন আজ মেলা উন্মুক্ত থাকছে মেয়েদের কেনা কাটার জন্য। ঐতিহ্যবাহী এ মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো মেলাস্থল সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। দুইদিনে হাজার হাজার মানুষের সমাগমে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় মেলা প্রাঙ্গণে।
স্থানীয় জিয়াপুর গ্রামের আসলাম হোসেন বলেন, আমার জন্মের পর থেকে এই মেলা দেখে আসতেছি। ঐতিহ্যবাহী সন্ন্যাসতলীর এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের জেলা থেকে অনেক মানুষ আসে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করতে। এ মেলার মূল আকর্ষণ ঘুড়ি। মেলায় ঘুড়ি বিক্রি করতে আসা বগুড়া শেরপুর এলাকার আশরাফ শেখ বলেন, ২ বছর ধরে এই মেলায় ঘুড়ি বিক্রি করতে আসি। এবছরও এসেছি ভালো ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে। মেলায় ঘুড়ি ক্রেতা দুঁপচাচিয়ার জিল্লুর বলেন, মেলায় এসে ৮টি ঘুড়ি কিনেছি ৬০ টাকা করে। মেলায় ঘুরে অনেক ভালো লাগতেছে। সন্ন্যাসতলী মেলা কমিটির সভাপতি মন্টু চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমার বাপ-দাদাসহ পূর্ব পুরুষরা এ মেলা করে গেছেন। আমাদের জন্মের পরে আমরা মেলাটি করে আসতেছি। এ মেলার আনুমানিক বয়স ৫০০ বছর। প্রতিবছরের মতো এবারও বসেছে সন্ন্যাসতলী মেলা। মেলাটি হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে পরিচালনা করে থাকি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই মেলায় আসেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সন্ন্যাসতলী মেলা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে হলেও বর্তমানে সব জাতের মানুষের মিলনমেলা পরিণত হয়েছে এই মেলা। মেলার মূল আকর্ষণ ঘুড়ি। এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের জেলা থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটে। মেলায় জিনিসপত্র ক্রয় করতে আসা ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে মেলা কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন ক্রেতাদের জিনিসপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো খাজনা দিতে হবে না। যা এ মেলার ইতিহাসে এ বছরই প্রথম।
এর আগে প্রতি বছর মেলায় এসে ক্রেতাদের জিনিসপত্র ক্রয়ের পর খাজনা দিতে হতো।