গভীর রাতে ঢাবির হলে ছাত্রলীগের দুই দলে সংঘর্ষ : আহত পাঁচ

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঢাবি প্রতিনিধি

গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা’ সূর্যসেন হল ও ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ হওয়া দুই গ্রুপের একটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের ও অন্যটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের। সংঘর্ষে আহতরা হলেন- সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জাবের বিন আমিন, একই হলের দ্বিতীয় বর্ষের নঈম, প্রথম বর্ষের শিহাব, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ ছাত্রলীগের মো. সুজন এবং শহীদুল্লাহ হল ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল মোল্লা। এদের মধ্যে জাবের, নঈম ও শিহাব; তানভীর হাসান সৈকত এবং সুজন ও নাজমুল মোল্লা; শয়নের অনুসারী বলে জানা যায়। আহতদের রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, সূর্যসেন হলের ২০৪ নম্বর কক্ষটিতে সৈকতের দুইজন অনুসারী থাকতেন। তাদের বের করে দিতে সেখানে শয়নের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে যায়। এরপর সৈকতের অনুসারীরা সেখানে উপস্থিত হলে উভয়পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ উত্তেজনা চলে। সৈকতের অনুসারীরা কক্ষ ছেড়ে দিতে না চাইলে শুরু হয় সংঘর্ষ। রাত ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়ে চলে রাত ৩টা পর্যন্ত। এতে উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। পরে ঘটনাস্থলে শয়ন, সৈকত ও হল প্রশাসন উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষকে নিবৃত করেন। অন্যদিকে, শহীদুল্লাহ্ হলে ঘটে ঠিক উল্টো ঘটনা। শয়নের অনুসারীর নামে বরাদ্দ রুম দখল করতে যায় সৈকতের অনুসারীরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন আহত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূর্য সেন হলের এক ছাত্রলীগ নেতা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সমর্থিত গ্রুপের ওমর ফারুক, রাকিব মুন্সী ও মিনহাজ ইমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হলের ৩২০, ২০৪ ও ৩৩১ কক্ষে অবস্থান করা সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারীদের বের করে দেন। রাত ১টার পর সৈকত গ্রুপের আরিফুর রহমান যুবরাজ, আব্দুল্লাহ খান শৈশব ও ফয়সালের নেতৃত্বে বিষয়টি মীমাংসা করতে গেলে শয়নের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় তারা সৈকতের অনুসারীদের হল থেকে বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেন।

এদিকে এসব ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, একাত্তর হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও জহুরুল হক হলে গভীর রাতে রুম থেকে বের হয়ে মুখোমুখি হন দুই পক্ষের অনুসারীরা। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বলেন, ছাত্রদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে আমরা ও হল প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নকে ফোন করলেও রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানান সূর্যসেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূইয়া। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, একটি রুমে বহিষ্কৃত একজন শিক্ষার্থীকে তোলা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। পরে আমাদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। তারপরও আমরা আজ একটি জরুরি সভা ডেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছি। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এদিকে ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাবেদ হোসেনের মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমি ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। আমরা এ ঘটনার পেছনের কারণ বের করার চেষ্টা করতেছি। এরপর আমরা হল প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে বসব, যাতে সামনে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।