চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে তৃতীয়বারের মতো ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এতে মাছ চাষি জেলেদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তৃতীয় দফায় নমুনা ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল এবং কালিবাউশ) মা মাছ। রোববার মা মাছের নমুনা ডিম ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম। ওইদিন দিনভর শত শত নৌকা নিয়ে জেলেরা নমুনা ডিম নেয়ার জন্য ভিড় করেন। জেলেদের প্রত্যাশা, সোমবার রাতে আরেক দফা ডিম ছাড়বে মা মাছ। এর পর প্রচুর পোনা উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে হ্যাচারিতে। এরই মধ্যে রেণু সংগ্রহে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা, যাতে জেলেরা নির্বিঘ্নে নমুনা ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। দেশের অন্যতম এই মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া নমুনা ডিম নেয়া হয় আশপাশের হ্যাচারিতে। সেই ডিম থেকে রেণু বের হয়। এর পর মাছের পোনা উৎপাদন হয়। হালদা থেকে সংগ্রহ করা ডিমের পোনা দ্রুত বড় হয় নদী পুকুর কিংবা মাছ চাষের দীঘি জলাশয়ে। এই ডিম থেকে উৎপাদিত পোনা দেশের মাছের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে।
এর আগে সকালে নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের নোয়াহাট, অংকুরীঘোনা, সিপাহীর ঘাট, মাছুয়াঘোনা, কাকতিয়ার মুখ, আজিমের ঘাট এলাকায় ডিম ছাড়ে মা-মাছ। এ সময় ৩ থেকে ৫০০ গ্রাম করে প্রতি নৌকায় নমুনা ডিম পাওয়া গেলেও দুপুর নাগাদ ২ থেকে ৩০০ গ্রাম করে ডিম সংগ্রহ করেন আহরণকারীরা। যদিও চলতি বছর আরও দুই দফা নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। গড়দুয়ারা ইউনিয়নের প্রবীণ ডিম আহরণকারী ইদরিস আলম জানান, প্রজনন মৌসুমে এ পর্যন্ত তিন দফায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। প্রায় দুই শতাধিক নৌকা নিয়ে শত শত আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করেন। পুরোদমে ডিম ছাড়ার আগে এ রকম নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ।
মৎস্য গবেষকরা বলেন, গত কয়েক দিনের বজ্রজসহ বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীতে মা মাছ ডিম দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাই হাটহাজারী ও রাউজান অংশের দুই শতাধিক ডিম আহরণকারী ডিম সংগ্রহের নৌকা, জাল, বালতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ডিমের প্রতীক্ষায় হালদার বুকে অবস্থান নেন। তাদেরকে সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নদীতে কাজ করেন দুই উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজরুল কিবরিয়া বলেন, গত ১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে মা-মাছের ডিম ছাড়ার ষষ্ঠ জো অর্থাৎ অমাবস্যার জো, যা ২১ জুন পর্যন্ত চলবে। এরই মধ্যে তৃতীয় দফায় মা-মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। যদিও এর আগে ঘূর্ণিঝড় মোখার আগে-পরে তীব্র দাবদাহে নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। যার কারণে এবার নমুনা ডিম ছাড়তে দেরি করেছে মা মাছ। এখন অবশ্য বৃষ্টি হওয়ায় ডিম ছাড়ার জন্য মা মাছের যে ধরনের পরিবেশ দরকার, তা সৃষ্টি হয়েছে। এখন নদীতে মা মাছ যে কোনো সময় পুরোদমে ডিম ছাড়বে।
ডিম সংগ্রহ ও রেণু উৎপাদন কার্যক্রম তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রস্তুত বলে জানান হাটহাজারীর ইউএনও মো. শাহিদুল আলম। তিনি বলেন, কার্প জাতীয় মা মাছ নিষিক্ত ডিম ছাড়ার পর রেণু থেকে পোনার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরিস্ফুটনের জন্য হ্যাচারিগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে ডিম সংগ্রহ ও রেণু উৎপাদন কার্যক্রম তদারকি করা হবে। পাশাপাশি আমাদের উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে নদীর ১০ কিলোমিটার এলাকায় নৌ-পুলিশ সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।
হালদা নদীতে মা মাছের ছাড়া নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করেন আহরণকারীরা। পরে এসব সংগৃহীত ডিম হ্যাচারিতে রেণু তৈরি করা হয়। সংগৃহীত মা-মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু ও পোনার দেশজুড়ে চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যায়। সাধারণ হ্যাচারিতে কৃত্রিম পদ্ধতিতে উৎপাদিত পোনার চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বড় হয়।