ইভটিজিংয়ে বাধা
গেটে তালা লাগিয়ে বাড়িতে আগুন দেয়ার অভিযোগ
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
নিজের বোনের ইজ্জত রক্ষায় ইভটিজারকে বাধা দেয়ায় সংবাদকর্মী আসিফ বাপ্পি ও তার পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। গভীর রাতে ঘরের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে পুরো বাড়িতে পেট্রোল স্প্রে করে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। ওই আগুনে দোতলা পুরো বাড়ি পুড়ে গেলেও এলাকাবাসী ও ফায়ার ব্রিগেডের প্রচেষ্টায় প্রাণে বেঁচে যান সংবাদকর্মী আসিফ বাপ্পি ও তার পরিবারের দুই বছর বয়সি শিশুসহ চারজন। গতকাল রাত আড়াইটার দিকে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়িরমাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার আসিফ বাপ্পি ওই এলাকার নজির আহমদের ছেলে ও কক্সবাজার থেকে প্রচারিত অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজ চ্যানেল ‘ডিএনএন’ এর সংবাদ বিভাগের সমন্বয়কারী। আসিফ বাপ্পি বলেন, আমরা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর এলাকাবাসী ও ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা দোতলার জানালা ভেঙে আমাদের উদ্ধার না করলে আমার দুই বছরের ভাতিজীসহ ঘরে থাকা চারজনই মারা যেতাম। তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী এলাকা নতুন বাহারছড়ার মোহাম্মদ মামুনের ছেলে মোহাম্মদ শাকিল নামের এক বখাটে প্রায় ৪ বছর ধরে তার কলেজপড়ুয়া ছোট বোন সানজানা আহমেদ সাইবাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। একবার তাকে অপহরণও করারও চেষ্টা করেছিল। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ, মামলাও হয়েছিল। কিন্তু সামাজিকভাবে সালিশ করে ওই বখাটেকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল এই শর্তে যে, সে কখনো তার বোনকে আর উত্ত্যক্ত করবে না। কিন্তু বারবারই সে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। আসিফ বাপ্পি ও তার পরিবার কক্সবাজার শহরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, শাকিল নামের ওই বখাটে সানজানা আহমেদ সাইবার পিছু ছাড়েনি। প্রতিনিয়তই সে তাকে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল।
সর্বশেষ কয়েকদিন আগে মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ওই হুমকি দেয়ার কয়েকদিনের মাথায় ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটল। অভিযোগে বলা হয়, রাত ২টার দিকে তারা ঘরের আশপাশে পেট্রোলের গন্ধ পান। কিন্তু ওটাকে পাশের ড্রেনের গন্ধ মনে করে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ওই সময় ঘরে ছিলেন সংবাদ কর্মী আসিফ বাপ্পি, তার বড় ভাই আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বাবু, বাবুর স্ত্রী সুমি আকতার ও তাদের দুই বছর বয়সি কন্যা সন্তান আনাদিয়া।
রাত আড়াইটার দিকে প্রতিবেশীদের আগুন আগুন চিৎকারে ঘুম ভাঙে আসিফ বাপ্পির। তখন দেখতে পান বাড়ির নিচতলা থেকে আগুন দোতলায় চলে এসেছে। ওই সময় বাপ্পি তার বড় ভাইয়ের রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাদের জাগিয়ে তোলেন। কিন্তু আগুনের কারণে তারা কেউই বাড়ির নিচে আসতে পারছিলেন না। তারা একটি রুমে আটকা পড়েন। পরে এলাকাবাসী ও ফায়ার ব্রিগেডের লোকজন এসে ওই রুমের জানালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করেন।
পরে দেখা যায়, বাড়িতে আগুন দেয়া দুষ্কৃতকারিরা বাড়ির মূল গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। জানালা ভেঙে উদ্ধার করা না গেলে হয়তো তাদের মৃত্যু হতো।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ বাপ্পি জানান, আগুনে পুড়ে বাড়ির সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে তার নগদ ৪ লাখ টাকা গচ্ছিত ছিল। সেই টাকাও উদ্ধার করা যায়নি। ভাবির স্বর্ণালংকারও পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় বোন সানজানা আহমেদ সাইবা বাবা নজির আহমদ সওদাগর ও মা সুমি আকতারকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বখাটে শাকিল কয়েকদিন আগে ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে। ঘটনার আগে তাকে ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ওই বাড়ির কাছাকাছি দেখা গেছে। তাছাড়াও ওই বখাটে ছাড়া তাদের সঙ্গে আর কারো সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই।
তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান সংবাদকর্মী আসিফ বাপ্পি।