কুষ্টিয়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত দুই লাখ ৮০ হাজার পশু
লাভের আশায় কৃষক ও খামারি
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া জেলায় পশু ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার হাটে এমনকি বাড়িতে ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীরা গরু ও ছাগল কিনে এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছেন। দেশের বাজারে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার পশু পাঠাতে প্রস্তুত কুষ্টিয়া জেলা। কুষ্টিয়ার গো-খামারি এবং কৃষকরা ভালো দামে গরু বিক্রি করতে পারায় বেজায় খুশি। তবে এলাকার গো-খামারি ও কৃষকদের এই হাসি শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না এ নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। দেশের বাজারে কুষ্টিয়া অঞ্চলের গরু ও ছাগলের আলাদা কদর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা গতকাল ঘুরে দেখা গেছে এবার এলাকায় প্রায় ৩ লাখ কোরবানির পশু রয়েছে যা স্থানীয় মানুষের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হবে। গত বছর কুষ্টিয়ার গো-খামারি ও কৃষকরা গরুর ভালো মূল্য পাওয়ায় এবারো জোরেশোরে পশুর প্রতি যত্ন নিতে শুরু করেছে। আশায় বুক বেঁধে আছে। এলাকার গ্রামেগঞ্জে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে ২/৪টি কোরবানির গরু পাওয়া যাবে না। শুধু কি তাই, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গো-খামার গড়ে উঠেছে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই কোরবানির গরু লালন-পালন এবং কেনা-বিক্রির কারণে এখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তন এসেছে। তার পরেও ধারাবাহিকভাবে পর পর কয়েকবার ভারতীয় গরু আসার কারণে এখানকার খামারি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছিল কিন্তু তারপরেও তারা হাল ছাড়েনি। গতবার ভালো লাভবান হওয়ায় এবার আরো উজ্জীবিত হয়ে সবাই কোরবানির পশুর জন্য নিবিড়ভাবে সময় ব্যয় করছেন। কুষ্টিয়া জেলা পশু সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে- এবার জেলার ৬টি উপজেলায় ২০ হাজার ৫৮৬টি খামার রয়েছে। এর মধ্য গরু প্রায় ২ লাখ, ছাগল ৬৬ হাজার এবং ভেড়া ৩ হাজারের মতো। সবেচেয়ে বেশি খামার এবং পশু কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সদর উপজেলায় সরকারি মতে ৪৫১টি খামারে গরুর পরিমাণ ৯৬ হাজার ৪৬টি, দৌলতপুর উপজেলায় ৪৩৫৪টি খামারে গরু রয়েছে ২৪ হাজার ১৭৮, কুমারখালী উপজেলায় ৪১৯৮টি খামারে গরুর সংখ্যা ২০ হাজার ২৫০, খোকসা উপজেলায় ৩১০৬টি খামারে গরু রয়েছে ১৮ হাজার ১৬, মিরপুর উপজেলায় ২৭৩৯টি খামারে গরু রয়েছে ৪৬ হাজার ৭৩৯টি এবং ভেড়ামারা উপজেলায় ১৭৬৮টি খামারে গরুর পরিমাণ ৮ হাজার ৮৭৯টি। তবে জেলার খামারি এবং কোরবানির পশুর সংখ্যা অনেকগুণ বেশি। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশালাকার গরু পালনের খবরটি সবার জানা। এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে সবার মাঝেই বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এলাকার গরুর হাটগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। রমজানের পর থেকেই দেশের বড় বড় ব্যাপারিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে কুষ্টিয়ায়। সদর উপজেলার পাটিকা বাড়ির হারুরিয়া গ্রামের গ্রামীণ গো-খামারের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস হোসেন জানান, তার খামারের ১৫৪টি গরু এরইমধ্যে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে আশানুরূপ দামে বিক্রি হয়ে গেছে। খোদ্দ আইলচারার ‘মণ্ডল’ খামারের স্বত্বাধিকারী ছলিম মণ্ডল জানান, তার খামারে ৯৮টি গরুর মধ্যে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর নিকট ২০টি গরু আশানুরূপ দামে বিক্রি হয়ে গেছে। এবার আগেভাগে গরু বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে টেনশনমুক্ত হয়েছি। তিনি আরো জানান, এবার জেলার কৃষক ও খামারিরা ভালো দামে গরু বিক্রি করছে। প্রতি দিনই গরুর হাটে প্রচুর গরু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্যাপারিরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বড় এবং বিভিন্ন আকারের পছন্দমতো গরু কিনছেন। এখন পর্যন্ত চাষিরা টেনশনমুক্ত রয়েছে। তাছাড়া সামনের দিনগুলোতে স্থানীয় ক্রেতারা কোরবানির পশু কেনা শুরু করবেন তাতেও ভালো দাম পাওয়ার আশা করছে সবাই। কুষ্টিয়া জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা জানান, এবারো জেলায় প্রচুর কোরবানির পশু রয়েছে। কৃষক এবং খামারিরা যত্ন নিয়ে পশু পালন করেছে। আমরা শুনেছি কৃষক এবং খামারিরা এবার কোরবানির পশু বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় সবাই খুশি। প্রতি উপজেলায় কোরবানির পশুর জন্য আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। পশুর রোগ প্রতিশেধক ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত রয়েছে। খামারি এবং কৃষকদের মাঝে চাহিদামতো তা ব্যবহার করা হচ্ছে। এরইমধ্যে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান- আমরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েছি কোথাও এখন পর্যন্ত গরু মোটাজাতাকরণের জন্য ট্যাবলেট সেবনের অভিযোগ পাইনি। এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা ও লিফলেট বিলি করা হয়েছে।