ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমানের দেয়া বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের এক্সপাঞ্জ করার প্রতিবাদে অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন অধ্যাপক লুৎফর ও সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম।
গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, অধিবেশনে অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান তার বক্তব্য প্রদানকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা শিক্ষার্থী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন। এতে শুরু হয় হট্টগোল। অধ্যাপক লুৎফর রহমানের বক্তব্যের মাঝে পয়েন্ট অব অর্ডারে নিন্দা প্রস্তাব আনেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম ও সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী। এরপর শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াহিদুজ্জামান পয়েন্ট অব অর্ডারে উপাচার্যের কাছে লুৎফর রহমানের দেয়া ‘শিক্ষার্থী নির্যাতন’ শীর্ষক বক্তব্যকে এক্সপাঞ্জ করতে বলেন। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমানের দেয়া শিক্ষার্থী নির্যাতনের শীর্ষক বক্তব্যকে এক্সপাঞ্জ করেন। এর প্রতিবাদে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সিনেট অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন সাদা দলের এই দুই অধ্যাপক।
পরে সাংবাদিকদের সামনে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমি বলেছি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু তারা ভিন্ন মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনের ওপর নির্যাতন করে তাদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করবে এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। এভাবে একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আমি আমার বক্তব্যে পত্রিকার রেফারেন্স টেনে কথা বলেছি। আমি একটি হলে থাকি না আমি কীভাবে জানব সেখানে কি হচ্ছে? সেটা অবশ্যই পত্রিকার রেফারেন্সেই বলব এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এটাকে তারা প্রত্যাহার করতে বলেছে। আমি যা বলেছি সত্য বলেছি এখানে কোনো ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আগে কখনো হয়নি যে, অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন পাশে এসে তাদের কর্মসূচি শুরু করেছে। কিন্তু কিছুদিন আগে আমরা শিক্ষকরা প্রোগ্রাম করছিলাম কিন্তু অপর পাশেই সেই ছাত্র সংগঠন তাদের ব্যানার নিয়ে শুধু দাঁড়ায়নি বরং মিছিল নিয়ে মহড়াও দিচ্ছিল। আমি তাদের আগেও বলেছি যারা ভিন্ন মতের রাজনীতি করছে তারাও তাদের বন্ধু, ছোট বা বড় ভাই। তাদের প্রতি যেন তারা সহানুভূতিশীল থাকে। এক্ষেত্রে উপাচার্য মহোদয়ের অভিভাবকের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তিনি তা পূরণ করে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়। বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিনেটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার। বাজেট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।