পাটের মতো পরিবেশবান্ধব আঁশ জাতীয় ফসল ‘কেনাফ’। মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে পাটের মতোই কার্যকর ভূমিকা পালন করে ফসলটি। খুলনার কয়রা উপজেলার লবণাক্ত জমিতে পাটের বিকল্প হিসেবে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে এ ফসলের। পাটের বিকল্প হিসেবে কেনাফ চাষে সফলতা পেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কয়রা উপজেলার হাতিয়ারডাঙ্গায় ৪ কৃষকের মাধ্যমে ৪ বিঘা জমিতে চলছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন। ১৫-২০ দিন আগে বপন করা বীজ থেকে এরই মধ্যে চারাও গজিয়েছে।
কেনাফ চাষের বিষয়টি কাছ থেকে দেখার জন্য বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আবদুল আউয়াল ও পরিচালক (কৃষি) নার্গিস আক্তার ১৬ জুন কয়রা সফর করেন। এ সময় তারা কেনাফ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন কৃষকদের। প্রথমবারের মতো কয়রার আমাদী ইউনিয়নের হাতিয়ারডাঙ্গা এলাকায় অপ্রচলিত এ ফসলের আবাদ করেছেন কৃষক প্রবীর সরকার। এরই মধ্যে তার জমিতে ১০-১২ ইঞ্চি, আবার কোথাও কোথাও ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়েছে কেনাফের চারা। কেনাফ আঁশ জাতীয় ফসল হলেও দেখতে একেবারেই পাট গাছের মতো নয়। কেনাফের পাতাগুলো ঢ্যাঁড়শের পাতার মতো বলে জানান এ কৃষক। তিনি বলেন, ‘এবারই প্রথম আমার এক বিঘা জমিতে কেনাফ চাষ করেছি। জায়গাটি লবণাক্ত। নানা সমস্যার কারণে আমন ধান ও তরমুজের বাইরে কখনো অন্য কোনো ফসল চাষ করিনি। এবার কয়রা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে কেনাফ চাষ করেছি। তারা আমাকে বিনামূল্যে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কেনাফ চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের উপকূলের কৃষিকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচলিত কৃষি থেকে কৃষকদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাটের বিকল্প হিসেবে কেনাফ চাষে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা গেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। অনাবাদি, অনুর্বর জমিতে অল্প পরিচর্যা ও স্বল্প খরচে ১১০ দিন থেকে ১২০ দিনে কর্তন করে কেনাফের ভালো ফলন পাওয়া যায়।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘কেনাফ একটি লবণসহিষ্ণু ফসল। শুধু তা-ই নয়, এটি জলাবদ্ধ জমিতেও বেড়ে উঠতে পারে। তাছাড়া পাটের চেয়ে বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ ক্ষমতাও এর অনেক বেশি। পাটের চেয়ে উৎপাদনও অনেক বেশি।’ এ কৃষিবিদ বলেন, ‘কেনাফ চাষে প্রতি বিঘা থেকে ১২ মণের বেশি আঁশ সংগ্রহ করা যায়, যা টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’