ঘনিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন হাটে উঠতে শুরু করেছে গরু। তবে এবার বড় কোনো গরু চোখে পড়েনি। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা থাকায় ক্রেতারা তাদের বাজেট অনুসারে কিনছেন কোরবানির পশু।
অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে এ জেলায়। জেলার জগদল ও শালবাহানসহ কয়েকটি হাটবাজারে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে বেশি গরু বিক্রি হতে দেখা যায়। এসব হাটে আড়াই লাখ টাকার কোন কোরবানি পশু বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
এবার হাটবাজারগুলোতে ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর চাহিদা ও দামও কিছুটা বেড়েছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও গরুর দাম পাচ্ছে না বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। আর ক্রেতারা বলছেন, এবারও গরুর দাম বেশি। অনেকে পাঁচণ্ডসাত ভাগে পশু কিনছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, পঞ্চগড়ে এবার কোরবানির পশুর (গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া) চাহিদা ৯০ হাজার ৬২টি। জেলায় ১৩ হাজার ৬৭০ জন ছোট-বড় খামারির মাধ্যমে কোরবানিযোগ্য পশু মজুত রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৯২টি। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪০ হাজার ৪৬০ এবং ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৯৩২।
খবর নিয়ে জানা যায়, জেলা শহরের রাজনগর হাট, জগদল হাট, বোদা উপজেলার নগরকুমারী হাট, তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ও শালবাহান হাট, দেবীগঞ্জের কালীগঞ্জ হাট, দেবীগঞ্জ হাট, ভাউলাগঞ্জ হাট ও আটোয়ারী উপজেলার ফরিকরগঞ্জ হাট বেশ জমে উঠেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে প্রচুর। তবে এবার ছোট ও মাঝারি গরুর দিকেই নজর বেশি ক্রেতাদের।
গতকাল বুধবার জেলার তেঁতুলিয়ার শালবাহান বাজার, জগদল ও বোদা পৌরসভা নগরকুমারী হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানি পশু আসছে। গেরস্ত ও দালালরা নসিমন, ট্রাক ও পিকআপে করে নিয়ে আসেন গরু ও ছাগল। হাটে পৃথক পৃথক স্থানে বসানো হয় গরু ও ছাগল বিক্রয়ের স্থান। বিভিন্ন আকারে ষাড়, বলদ ও গাভী গরু ক্রেতারা তাদের বাজেট অনুসারে পছন্দ অনুযায়ী কিনছেন।
বোদা পৌরসভা নগরকুমারী হাটবাজারে আসা নুরুল ইসলাম জানান, বড় ও মাঝারি গরুর বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে জানান নুরুল ইসলাম। এ হাটে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ষাঁড় গরু বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান।
তেঁতুলিয়া শালবাহান হাটে গেরস্ত আতিকুল ইসলাম জানান, আমার ষাড় গরুটা দাম চেয়েছিলাম ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করেছি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়।
ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, বেশ কয়েকটি গরু এনেছি। তার মধ্যে একটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম হাকছি, ক্রেতারা বিভিন্ন দাম বলছেন। দামে মিললে দিয়ে দিব। তবে এ হাটে দেড় লাখ টাকার উপরে কোনো গরু নেই। বেশিরভাগ ক্রেতাই ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনছেন।
গরু কিনতে আসা মোশারাফ হোসেন বলেন, আমরা পাঁচজনে ভাগে কোরবানি দিব। তাই হাটে গরু কিনতে এসেছিলাম। বাজেট অনুযায়ী ৮৫ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় গরু কিনেছি। তবে দুঃখজনক, হাটে গরু মাপার কোনো ডিজিটাল স্কেল চোখে পড়েনি। এটা বাজারে রাখলে ক্রেতারা গরু ওজন করে কিনতে পারতেন। ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেজন্য সংশ্লিষ্ট হাট ইজারাদারদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
শালবাহান হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার হাটে ভারতীয় গরু নেই। কারণ এবার দেশীয় গরুর আমদানি প্রচুর। সবার পছন্দও দেশীয় গরু। শান্তিপূণভাবেই এখানে কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে। এ হাটে খামারির বিদেশি জাতের গরুও বিক্রি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন।
এদিকে এ বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গিয়েছিল গরুতে লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। এর কারণে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়। তবে কোরবানি ঈদ আসার অনেক আগেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কোরবানির ক্ষেত্রে এই রোগ কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানান জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
জেলা ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, পঞ্চগড়ের বেশ এলাকায় গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এখন তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে ১ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯০ হাজার গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তাই কোরবানির ক্ষেত্রে এই রোগ কোনো প্রভাব ফেলবে না। আর অসুস্থ্য ও গর্ভবতী গাভি শনাক্তের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বসানো হয়েছে ভেটেরিনারি ক্যাম্প।