চৌদ্দগ্রামে দুই গৃহবধূর যৌথ খামার

১৫ লাখের বাদশা ও ১২ লাখের ডিপজল দেখতে জনতার ভিড়

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একই খামারে উন্নত জাতের একাধিক গরু লালন-পালন করে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখেছেন একই পরিবারের দুই গৃহবধূ জেসমিন আক্তার ও জহুরা বেগম। একই পরিবারের দুই ভাইয়ের স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের নারচর গ্রামের প্রত্যাশা ডেইরি ফার্মে একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছে ১৫শ’ কেজি ওজনের জার্সি জাতের গরু বাদশা, ১২শ’ কেজি ওজনের ডিপজল এবং ৮শ’ কেজি ওজনের শাহী ওয়াল জাতের রাজাবাবু। দুই গৃহবধূ খামারি বাদশার দাম হাঁকিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা, ডিপজলের দাম ১২ লাখ এবং রাজা বাবুর দাম ১০ লাখ টাকা হাঁকিয়েছেন। বাদশা, ডিপজল এবং রাজাবাবুর পাশাপাশি খামারটিতে কোরবানির জন্য অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি উন্নত জাতের গরু প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় অনেক বড় বড় গরুর খামার রয়েছে। তবে অজোপাড়া গায়ের একই পরিবারের দুই গৃহবধূ উন্নত জাতের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি গরু প্রস্তুত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এদিকে দুই গৃহবধূর প্রত্যাশা ডেইরি ফার্মের বাদশা, ডিপজল এবং রাজাবাবুকে দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন উৎসুক জনতা। পরিবারের গৃহস্থলির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এত বড় গরুর খামার তৈরি সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই জেসমিন ও জহুরা বেগমকে দেখে গরুর খামার তৈরিতে উৎসাহিত হচ্ছে।

উৎসুক জনতার কয়েকজন জানান, নারী হয়েও যে কোনো কঠিন কাজ করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই দুই নারী। এদের দেখে এলাকার পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীও গরু পালনে এবং খামার তৈরিতে উৎসাহিত হচ্ছে। কোরবানির ঈদে প্রস্তুতকৃত গরুগুলো দেখতে খামারটি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌসি আক্তার। স্থানীয় সূত্রে এবং খামার পরিদর্শন করে জানা যায়, ৩ বছর আগে জেসমিন আক্তার এবং জহুরা বেগমের স্বামী মাত্র ২৪টি গরু নিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই দুই স্বামীর চাকরি হওয়ায় তারা কর্মস্থলে যোগদান করেন। এতে খামারটি বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। কিন্তু ওই দুই নারী খামারটি বন্ধ হতে দেননি। নিজেদের স্বামীদের বুঝিয়ে খামারটির অন্তত ২৫টি গরু দেখাশোনার অসম্ভব এক দায়িত্ব কাঁধে নেন দুই নারী। নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং স্বামীদের মানসিক সমর্থন পেয়ে খামারটি আজ পুরো উপজেলায় বিখ্যাত। প্রত্যাশা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জেসমিন আক্তার এবং জহুরা বেগম বলেন, আমাদের ফার্মের প্রায় সবগুলো গরুই বিভিন্ন উন্নত জাতের। এরমধ্যে শখের বশে সবচেয়ে বড় জার্সি জাতের ২টি গরুর নাম বাদশা, ডিপজল এবং শাহি ওয়াল জাতের গরুটির নাম রাজা বাবু রাখি। তারা জানান, সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচা ঘাস, খড়, ভূসি, চিতাগুড় এবং খৈল রয়েছে গরুগুলোর খাবারের তালিকায়। কোনো বিদেশি ট্যাবলেট কিংবা মেডিসিন ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরুগুলো বড় করা হয়েছে। অন্যান্য গরুগুলোর তুলনায় বড় এ তিনটি গরুকে প্রতিদিন তিনবেলা গোসল করানো হয়। সময়মতো খাবার না দিলে তারা চিৎকার শুরু করে। গরুগুলোর যত্নে, খাবার জোগানে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। উপর্যুক্ত দাম না পেলে অনেক টাকা লোকসান হবে বলেও জানান তারা। এসময় তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌসি আক্তারকে ধন্যবাদ জানান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌসি বলেন, একই পরিবারের দুই গৃহবধূ প্রত্যাশা ডেইরি ফার্মে আসন্ন কোরবানির জন্য অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি উন্নত জাতের গরু প্রস্তুত করেছেন। আমি শুরু থেকেই আদম্য এ দুই নারীর পাশে ছিলাম। তারা যখন যে সহযোগিতা চেয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে চিকিৎসাসেবাসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।